এখন থেকে নতুন ব্যাংক অনুমোদনে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ করা হচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকা ।পুরনো ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রেও একই পরিমাণ পরিশোধিত মূলধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে এ সংক্রান্ত আদেশ দিয়েছেন ।
ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে আগামীতে কোনো নতুন ব্যাংক এলে এর ভিত্তি শক্ত হবে। পাশাপাশি বিগত কয়েক বছরে অনুমোদন পাওয়া ৯ ব্যাংকের মতো দুর্বল পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা থাকবে না- এমনটি মনে করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, এ মুহূর্তে নতুন ব্যাংক করতে হলে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪শ’ কোটি টাকা বাধ্যতামূলক।
সেই অনুযায়ী বর্তমান সরকারি-বেসরকরি প্রতিটি ব্যাংককের ৪শ’ কোটি টাকা করে পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, অর্থমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি।
সরাসরি আর ব্যাংক দেয়া হবে না- এটি না বলে পরিশোধিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা করে দেয়া হবে। এর মাধ্যমে নতুন ব্যাংক আসাকে নিরুৎসাহিত করা হবে। সেদিক থেকে এটি একটি ভালো উদ্যোগও। এর বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ব্যাংকিং) ফজলুল হক বলেন, অর্থমন্ত্রীর এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ প্রথমে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংস্কার করতে হবে। বর্তমান আইনে একটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন রাখার বিধান রয়েছে। এটি পরিবর্তন করতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে।
২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত নতুন ৯টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এগুলো হল- ইউনিয়ন ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক, সাউথ-বাংলা ব্যাংক, এনআরবিজি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক ও মেঘনা ব্যাংক।
অনুমোদন পাওয়ার পরপরই ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণের কবলে পড়েছে এসব ব্যাংক। এতে আর্থিক ঝুঁকি বাড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হচ্ছে ফারমার্স ব্যাংকের। এ ব্যাংকের
খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৭১ কোটি টাকা। আর ৩৫০ কোটি টাকা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এনআরবিসি ব্যাংক এবং ২৩৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে মেঘনা ব্যাংক।
এ পরিস্থিতিতে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন বিষয়ে বরাবরই বিরোধিতা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না। কারণ নতুন ব্যাংক অনুমোদন অর্থনীতির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না, তা সহজেই বোঝা যায় নতুন ব্যাংকের পাশাপাশি গোটা ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি ও লাগামহীন খেলাপি ঋণ থেকে।
এ ছাড়া যেখানে বিদ্যমানগুলো ভালো ব্যবসা করতে পারছে না, সেখানে নতুন উদ্যোক্তা কেন আসছে- এমন প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক।