নকশীকাঁথা ব্যান্ডের এক যুগ শেকড় নিয়ে কাজ করতেই বেশি আনন্দ পাই: সাজেদ ফাতেমী
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৯-০১-২৬ ১১:৪৫:২৬
সংগীতেই তার বসবাস। দিনের অনেকটা সময় ডুবে থাকেন গান নিয়ে ভাবনা ও গবেষণায়। গত বছর নভেম্বরে আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টে নিজের ব্যান্ড নকশীকাঁথা নিয়ে পারফর্ম করার পর থেকে ব্যান্ডের সবাই ফুরফুরে মেজাজেই আছেন। ২৫ জানুয়ারি নকশীকাঁথা ব্যান্ডের বয়স এক যুগ পূর্ণ হতে যাচ্ছে। দিনটি সামনে রেখে নিজেদের গানবাজনার কথা জানিয়েছেন ব্যান্ডের ভোকাল সাজেদ ফাতেমী। লোকগান নিয়ে গত প্রায় ১৫ বছর থেকে গবেষণা করছেন সাজেদ ফাতেমী। দীর্ঘ ২২ বছর দেশের প্রথম সারির ছয়টি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। গত বছর নভেম্বরে তিনি রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পাবলিক রিলেশন্স ডিরেক্টর হিসেবে যোগদান করেন। চাকরি ও গানে সমান মনোযোগ তার। শিল্পী জীবনের শুরু ১৯৮৪ সালে লালমনিরহাটে সোচ্চার সংসদ নামে একটি সংগঠনের আয়োজনে সাত দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে রানার্স আপ হওয়ার মধ্যে দিয়ে ফাতেমীর শিল্পী জীবনের শুরু। এরপর থেকে
আশপাশের জেলায় তার গান গাওয়ার ডাক আসতে থাকে। এ সময়ই পুরোদস্তুর গানে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এইচএসসি পড়ার সময় ‘স্পন্দন’ নামে একটি ব্যান্ড গঠন করেন। তিনি ছিলেন ব্যান্ডের ভোকাল। এইচএসসি পাশের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরই মধ্যে থেমে যায় স্পন্দন।
স্বপ্নের শুরু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থিয়েটারে জড়িত ছিলেন সাজেদ ফাতেমী। এ সময় ১৭ টি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন ও চারটি নাটকের নির্দেশনা দেন। বিশ^বিদ্যালয় জীবন শেষে ১৯৯৯ সালে কয়েক বন্ধু মিলে থিয়েটার ফর রিসার্চ এডুকেশন অ্যান্ড এম্পাওয়ারমেন্ট (ট্রি) নামে নাটকের একটি এনজিও গড়ে তোলেন। সেই এনজিও নিয়ে তিনি ডেঙ্গু, এইডস, কিশোরী স্বাস্থ্য, শিশুশ্রম, বর্ণবাদসহ নানান ইস্যুতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে পথ নাটক তৈরি করে বিভিন্ন জেলায় পরিবেশন করেছেন। বিশেষত এইডস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির কাজে বড় সাফল্য পায় ট্রি। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন এইডস ইন এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক (আইক্যাপ) অংশগ্রহণের সুযোগ পান তারা। সাজেদ ফাতেমীর প্রথম একক অডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে। অ্যালবামটি সুপারহিট হয়। এনটিভি থেকে ডাক আসে বাউল গান নিয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার। শুরু হয় লোকগান নিয়ে তার স্বপ্নের শুরু।
মন আমার সন্ধান করি সাজেদ ফাতেমী বাউল গান নিয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার
জন্য ২০০৪ সালে ডাক পান এনটিভি থেকে। বিশেষ ওই অনুষ্ঠান ‘মন আমার সন্ধান করি’ উপস্থাপনা শুরু করার মধ্য দিয়ে লোক গান নিয়ে গবেষণার নতুন এক দিশা পান তিনি। শুরু হয় এক নতুন জীবন। টেলিভিশনের শ্যুটিং ইউনিট নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াতে থাকেন। প্রতিভাবান বাউল শিল্পীদের খুঁজে বের করে তাদের জীবন, গান ও তাদের বাউল হয়ে ওঠার গল্পগুলো তুলে আনতে থাকেন টেলিভিশনের পর্দায়। বাউল গান নিয়ে সাপ্তাহিক ওই অনুষ্ঠান বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। অনুষ্ঠানটি চলে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। ‘মন আমার সন্ধান করি’র পর বাউল গান নিয়ে বৈশাখী টেলিভিশনে ‘জীবন এতো ছোট ক্যানে’, বিটিভিতে ‘অনুসন্ধান’ ও সময় টিভিতে ‘অন্তরে অচিন পাখি’ শিরোনামে আরও তিনটি গবেষণামূলক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সাজেদ ফাতেমী। ব্যান্ড গঠন বিভিন্ন সামাজিক সংকট নিয়ে গান করছিলেন আগে থেকেই। আর সেসব গান লোকজ সুরেই পরিবেশন করছিলেন। সেই পরিবেশনার রীতি আরও জোরদার করে তুলতে ২০০৭ সালে ব্যান্ড গঠন করেন সাজেদ ফাতেমী। সে বছর ২৫ জানুয়ারি ব্যান্ডের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ২০০৮ সালে ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘নজর রাখিস’ প্রকাশিত হয়।
২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় ব্যান্ডের দ্বিতীয় অ্যালবাম‘নকশীকাঁথার গান’। গত ১২ বছর ধরে ব্যান্ড নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
ব্যাটেলফিল্ড স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস
সাজেদ ফাতেমী বলেন, ‘ব্যান্ডের ১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। পেশাদার শিল্পী তৈরির লক্ষ্য নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাটাশুরে ব্যাটেলফিল্ড স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস নামে একটি মিউজিক স্কুল চালু করছি।’ স্কুলটির কার্যক্রম আগামী মাসেই শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এই স্কুলে একজন শিক্ষার্থী ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক, ক্ল্যাসিক্যাল পিয়ানোসহ বিভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্টের ওপর এক বছরের প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। সাজেদ ফাতেমী বলেন, এই স্কুলের বিশেষত্ব হলো, শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো
দিন ও সময়ে তাদের কাঙ্খিত বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। আমার জানামতে, বাংলাদেশে এখনো এমন প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি।’ লোকগানেই শেকড় গাথা সাজেদ ফাতেমী বলেন, ‘আমার শেকড় নিয়ে কাজ করছি। এতেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই। বাংলাদেশের লোকসংগীত বিশে^ও দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে সামান্য হলেও ভূমিকা রাখতে চাই। আর তাই নকশীকাঁথার মায়ায় এভাবে জড়িয়ে আছি। নকশীকাঁথা ব্যান্ডের লাইনআপ সাজেদ ফাতেমী: দল প্রধান ও ভোকাল
জে আর সুমন: অ্যাকুইস্টিক গিটার, রাবাব ও দোতারা
বুলবুল সাহা: কাহন ও পারকেশন্স
ফয়সাল আদনান: বেইজ গিটার
রোমেল হাসান: মেলোডিকা ও অ্যাকোর্ডিয়ান