শীত মৌসুমে দেশে দেশে পাম অয়েলের চাহিদা বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কমেছে। এর জের ধরে বেচাকেনা কম থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম কমতির দিকে রয়েছে। দেশীয় আমদানিকারকদের সামনে কম দামে পাম অয়েল আমদানির সুযোগ রয়েছে। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশে বাড়তে শুরু করেছে পণ্যটির দাম। রাজধানীর পাইকারি বাজারে দেড় মাসের ব্যবধানে প্রতি মণ (৩৭ কেজি ৩২০ গ্রাম) পাম অয়েলের দাম সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বেড়েছে। গত দেড় মাসে পাইকারি বাজারে সয়াবিন তেলের দামও বাড়তির দিকে ছিল।
গতকাল রাজধানীর পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ভোজ্যতেলের পাইকারি আড়তগুলো ঘুরে প্রতি মণ পাম অয়েল ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। সে হিসাবে, প্রতি কেজি পাম অয়েলের দাম পড়ে ৫৮ টাকা ৯৫ পয়সা। দেড় মাস আগেও রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতি মণ পাম অয়েল ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ প্রতি কেজি পাম অয়েলের দাম ছিল ৫০ টাকা ৯১ পয়সা। সে হিসাবে, দেড় মাসের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে মণপ্রতি ৩০০ টাকা, কেজিতে ৮ টাকা ৪ পয়সা।
গতকাল পাইকারি বাজারে প্রতি মণ সয়াবিন তেল ২ হাজার ৯১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেড় মাস আগেও পণ্যটি মণপ্রতি ২ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সে হিসাবে, দেড় মাসের ব্যবধানে রাজধানীয় পাইকারি বাজারে প্রতি মণ সয়াবিন তেলের দাম ৬০ টাকা বেড়েছে।
পাইকারি পর্যায়ে বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে ভোজ্যতেলের খুচরা বাজারেও। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারগুলো ঘুরে প্রতি কেজি পাম অয়েল ৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। অন্যদিকে সয়াবিন তেল বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ৮৫ টাকায়। দেড় মাসের ব্যবধানে রাজধানীতে খুচরা পর্যায়ে পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের দাম কমতির দিকে রয়েছে। ২০১৮ সালের জুনে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েলের গড় দাম ছিল ৬৫৬ ডলার ৫০ সেন্ট। এর পর থেকে পণ্যটির ধারাবাহিক দরপতন বজায় রয়েছে। জুলাইয়ে প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৬১৬ ডলার ১৪ সেন্টে। দরপতনের ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বরে পাম অয়েলের গড় দাম টনপ্রতি ৫৩৫ ডলারে নেমে এসেছে। চলতি মাসে এ দাম আরো কমতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দামেও ধারাবাহিক নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে। গত বছরের জুনে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় দাম ছিল ৭৮৮ ডলার ৫৭ সেন্ট। এর পর থেকে পণ্যটির দাম আর বাড়েনি। দরপতনের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৭২৭ ডলার ৮৮ সেন্টে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতির দিকে থাকায় কয়েক মাস ধরে তুলনামূলক কম দামে পাম অয়েল ও সয়াবিন তেল আমদানির সুযোগ পেয়েছেন দেশীয় আমদানিকারকরা। এর পরও দেশের বাজারে পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দেশীয় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতির দিকে থাকলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় বাড়তি দামে পাম অয়েল ও সয়াবিন তেল আমদানি করতে হচ্ছে। দেশের বাজারে পণ্য দুটির সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে এটা অন্যতম একটি কারণ।
এ বিষয়ে ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা বণিক বার্তাকে বলেন, শীত মৌসুমে চাহিদা কম থাকার বিপরীতে বাড়তি উৎপাদনের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের দাম কমতির দিকে রয়েছে। তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ অন্যান্য পণ্যের মতো ভোজ্যতেলের বাজারেও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের দামে।