২০১৯ সালের শুরু থেকেই বাড়তে শুরু করেছে রেমিটেন্স প্রবাহ।এ বছরের জানুয়ারী মাসেই রেকর্ড ১৫৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসিরা।এর আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ২১ কোটি ৩ লাখ ডলার।
এ বছরের জানুয়ারি মাসেই এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে প্রবাসীরা এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল ২০১৪ সালের জুলাই মাসে। ওই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৪৯ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার। ফলে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা মাসের হিসেবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে অর্থাৎ গত জুলাই-১৮ থেকে জানুয়ারি-১৯ পর্যন্ত সময়ে প্রবাসীরা দেশে ৯০৩ কোটি ৩৬ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৩৪ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। ফলে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের মধ্যে গত জুলাই মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠায় ১৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার, আগষ্টে ১৪১ কোটি ১০ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ১১২ কোটি ৭৩ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১১৮ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ১২৩ কোটি ডলার আর সর্বশেষ গত মাসে আসে ১৫৯ কোটি ডলার।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম রেমিট্যান্স বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ মূলত দুইটি। একটি হলো, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। এতে করে প্রবাসীরা বিদেশ থেকে ডলার পাঠালে আগের তুলনায় বেশি টাকা পাচ্ছেন। এই কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গেছে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপ বিশেষ করে অবৈধ হুন্ডি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্জিকা বছর হিসাবে, ২০১৮ সালে দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার। এটি আগের বছরের চেয়ে ২০০ কোটি ৭৮ লাখ ডলার বেশি। ২০১৭ সালে দেশে রেমিট্যান্সে আসে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৫ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে অর্থবছর হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আছে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার,. ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৯০৩ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। ফলে, চলতি অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স প্রবাহ বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে আরো বাড়বে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি বাংলাদেশী অবস্থান করছেন। এইসব প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে প্রথমে রয়েছে সৌদি আরব। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, যুক্তরাজ্য, কাতার, ইতালি ও বাহরাইন।