আরও তিনটি ব্যাংকের অনুমোদ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক তিনটি হলো: বেঙ্গল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক। রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের জরুরি সভায় তিনটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকার কম আছে, সেগুলোকে আগামী দুই বছরের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো দুই বছর সময় পাবে।’ এর আগে, গত বছরের ২৯ অক্টোবর পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংককে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এই নিয়ে বাংলাদেশে মোট তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬২। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬১টিতে। এর আগে লাইসেন্স পাওয়া ৫৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৫৭টি কার্যক্রম চালাচ্ছে। সর্বশেষ গত অক্টোবরে চূড়ান্ত অনুমোদন পায় পুলিশ সদস্যদের মালিকানায় ‘কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ’। এটি এখনও কার্যক্রম শুরু করেনি।
প্রায় এক বছর ধরে অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক। এর আগে গত ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও কোরাম সংকটের কারণে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়। ওই সভা থেকেই নতুন তিন ব্যাংককে এলওআই দেওয়ার কথা ছিল।
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংককে এলওআই দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। তবে পরবর্তী পর্ষদ সভা থেকে এলওআই ইস্যু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এছাড়া পর্ষদের ওই সভা থেকে পিপলস ব্যাংক এবং সিটিজেন ব্যাংককে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়েও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্ষদ। ব্যাংক দুটির উদ্যোক্তাদের কিছু কাগজপত্র ঘাটতি থাকায় তা সরবরাহ করতে বলা হয়।
গত অক্টোবরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ বোর্ড সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পায় পুলিশ সদস্যদের মালিকানায় ‘কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ’। ওই সভায় এজেন্ডাভুক্ত তিন ব্যাংকের কিছু কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় অনুমোদনের জন্য শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। শর্তগুলো পূরণ হওয়ায় বেঙ্গল কমার্সিয়াল ব্যাংককে অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে নতুন এই ব্যাংকগুলো কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
বেঙ্গল ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। দেশে তাদের প্লাস্টিক শিল্পসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের ভাই। দ্য সিটিজেন ব্যাংকের মালিক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক। পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা এম এ কাশেম।
উল্লেখ্য, নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ও ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার পুরোপুরি এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরপই নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি থাকলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে তারা পিছু হটে। পরে ফারমার্স ব্যাংকসহ নতুন ৯টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করে সরকার। লাইসেন্স পাওয়া আগের এই ব্যাংকগুলো পুরোপুরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলতে গিয়ে ফারমার্স ব্যাংক ডুবতে বসেছে। ব্যাংকটির নাম বদলে এখন পদ্মা ব্যাংক রাখা হয়েছে।