৪ বছরে ৮০ ভাগ গমের আবাদ কমেছে নড়াইলে

সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-০২-১৮ ১৯:১১:৩৭


নড়াইল জেলা বহু বছর ধরে খাদ্যশষ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন ।এখানকার চাষিরা আদিকাল থেকেই নানা কৃষিপণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি গমের আবাদ করতেন।এক সময় জেলায় প্রচুর পরিমান গমের উৎপাদন হত। বিভিন্ন কারনে দিন দিন এই গমের আবাদ আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। গত চার বছরেই জেলায় গমের আবাদ কমেছে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ। উৎপাদন খরচের তুলনায় গমের দাম কম থাকা,কয়েক বছর সরকারীভাবে গম সংগ্রহ না করা, গমে ব্লাষ্ট রোগসহ বিভিন্ন প্রকার রোগ এর আক্রমন হওয়ায় গমের আবাদে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন এলাকার কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে,২০১৫-১৬ মওসুমে জেলায় গম আবাদ হয়েছিল ৬ হাজার ৩শ ২ হেক্টর জমিতে। ২০১৬-১৭ মওসুমে তা কমে দাড়ায় ৪ হাজার ১২৪ হেক্টর জমিতে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে আগের বছরের আবাদের সমান ৪ হাজার ১২৪ হেক্টর আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হলেও চাষ হয় মাত্র ১ হাজার ৩’শ ৭০ হেক্টর। ২০১৮-১৯ মৌসুমে (চলতি বছর) জেলার তিনটি উপজেলায় গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ হাজার ১’শ ১৫ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩’শ ৩০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় এবছর গমের আবাদ কমেছে ৪ হাজার ৯’শ ৭২ হেক্টর। গত ৪ বছরে প্রায় ৫ হাজার হেকক্ট জমিতে গমের আবাদ করেনি কৃষক, ৪ বছরে গমের আবাদ কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ।

নড়াইল সদরের তালতলা এলাকার  এক কৃষক জানান,৬শ থেকে ৭শ টাকা খরচ হয় এক মন গম উৎপাদন করতে । মৌসুমে বাজারে প্রতি মন গম বিক্রি হয় মাত্র ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা। সরকারী ভাবেও যথা সময়ে গম কেনা হয়না। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গমের আবাদ থেকে সরে এসেছি।

লোহগড়া উপজেলার কৃষকরা জানান, বর্তমানে বাজারে এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫/৪৮ টাকা, এক কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫/২৬ টাকা। বাজারে আটার দাম কম থাকায় কৃষকেরা গমের দাম না পেয়ে গমের আবাদ ছেড়ে দিচ্ছেন।

গত দুই বছরে জেলায় সরকারীভাবে গম সংগ্রহ করা হয়নি ফলে কৃষকেরা গমের নায্য দাম থেকে বঞ্চিত। এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক(ভারপ্রাপ্ত) মনোতোষ কুমার মজুমদার বলেন,২০১৭ সালে ব্লাষ্ট রোগের কারনে গম সংগ্রহ হয়নি,গত বছরও জেলায় গমের সংগ্রহ হয়নি। এ বছর আবাদ কম হয়েছে,গম সংগ্রহ হবে কিনা জানিনা।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় চাষিরা তাদের জমিতে এবছর গমের বীজ বপন করতে পারেনি। সেই জন্যই চলতি বছরে গমের আবাদ অনেক কম হয়েছে। এছাড়া গমে ব্লাষ্ট রোগের কারনেও কৃষকদের মনে ভয় ঢুকে গেছে।এবছর অনেকগুলো প্রদর্শনী প্লট করে কৃষকদের গম চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এছাড়া ব্লাষ্ট রোগ থেকে মুক্তি পেতে কৃষকদের মাঝে প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে।

গমের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য কৃষকদের কথা চিন্তা করে গমের নায্য মূল্য নির্ধারন করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে গম কিনবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।