চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাথমিক ভাবে শুরু হয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী উচ্চ মূল্যের পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সবজি ব্রোকলির চাষ। আর এ সবজি চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পেয়েছেন এখানকার চাষিরা। অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় ব্রোকলি চাষে ঝুঁকছেন এই জেলার অনেক চাষি।
ক্যান্সার প্রতিরোধী অন্যতম এই সবজি চাষ করে কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন, সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পাওয়ায় আগামী দিনে উৎপাদন পর্যায়ে ব্রোকলি চাষ সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলছেন কৃষি বিভাগ।
অনেকটা ফুলকপির মতো দেখতে সবুজ এই সবজিটি উন্নত বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এটি অপ্রচলিত সবজির তালিকায়। তবে লাভজনক এই সবজির আবাদ ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হচ্ছে এখানে। ক্যান্সার প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় ভোক্তাপর্যায়ে এর চাহিদা বাড়ছে দিন দিন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিভাগের উদ্যোগে গত দুই বছর পরীক্ষামূলকভাবে চাষে কাঙ্খিত সাফল্য পাওয়ায় এবার বাণিজ্যিকভাবে তিন হেক্টর জমিতে ব্রোকলি চাষ করা হয়।
শ্যামপুরের ব্রোকলি চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রোকলির বাজার নিয়ে প্রথম দিকে সংশয় ছিল। আমি এবার এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। তাতে চার হাজার ব্রোকলির চারা লাগিয়েছিলাম। চাহিদা বাড়ায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে চাষের পরিমাণ বাড়াব।’
এই এলাকার কৃষকরা জানান, রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় বলে ব্রোকলি অনেকটাই কীটনাশকমুক্ত । তারা বলেন, ‘অন্যান্য কপি গোত্রের মতোই এর চাষাবাদ পদ্ধতি।এটা চারা তৈরি থেকে মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে উত্তোলনযোগ্য। বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। উৎপাদিত ব্রোকলি বিক্রি করে আয় হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
বর্তমানে বাজারে প্রতিটি ব্রোকলি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়।
এক কৃষক জানান, প্রথম বার ব্রোকলি চাষে আশানুরুপ সফলতা পাননি তিনি। এ সময় পাশে এসে দাঁড়ায় উপজেলা কৃষি বিভাগ। এরপরেই আসে সফলতা। তা দেখে উদ্বুদ্ধ হয় স্থানীয় কৃষকরা। লাভজনক এই সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তারা। এরপর থেকে এখানে ব্রোকলির বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
তারা আশা করছেন, ব্রোকলির চাহিদা বাড়ায় এবং দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতে এ সবজি চাষে বিপ্লব ঘটবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম আমিনুজ্জামান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া ব্রোকলি চাষের জন্য উপযোগী। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় ‘ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম-২’(এনএটিপি-২) এর আওতায় স্থানীয় কৃষি বিভাগ, কৃষক পর্যায়ে উচ্চমূল্যের এই ফসল উৎপাদন ও প্রদশর্নীর উদ্যোগ নেয়। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও ক্যানসার প্রতিরোধী ব্রোকলি একটি নিরাপদ সবজি। আর নতুন সবজি হিসেবে এর বাজারজাতকরণে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ।
শিবগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম আজম কনক বলেন, কৃষকদের উদবুদ্ধ করে এই ব্রোকলি চাষ শুরু হয়। এখন তা সফল চাষ বলে গণ্য হতে যাচ্ছে।
ব্রোকলি চাষে বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পাওয়ায় আগামীতে উৎপাদন পর্যায়ে জনপ্রিয় করা ও এর সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হুদা। ব্রোকলি চাষে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে কৃষি বিভাগ বলে জানান তিনি।