২০১৯-২০ মৌসুমে দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো পাম অয়েলের বৈশ্বিক চাহিদায় মন্দাভাব দেখা যেতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে আরো কম দামে পাওয়া যাবে পাম অয়েল।
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদনে চাঙ্গাভাব বজায় রয়েছে। তবে এর বিপরীতে শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোয় পণ্যটির চাহিদা হয় কমে গেছে, নয়তো প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে এসেছে। এর প্রভাব পড়েছে পাম অয়েলের দামে। । এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের মতো পাম অয়েল আমদানিকারক দেশগুলোর জন্য কম দামে পণ্যটি আমদানির বড় সুযোগ এনে দিতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্স ও এগ্রিমানি।
পাম অয়েল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দুই দেশ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। বৈশ্বিক উৎপাদনের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশী পাম অয়েল উৎপাদন হয় এ দুটি দেশে। ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ায় আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৪ কোটি ১৫ লাখ টন পাম অয়েল উৎপাদন হয়েছে, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে বিদায়ী বছরে মালয়েশিয়ায় সব মিলিয়ে ২ কোটি ৫ লাখ টন পাম অয়েল উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। মালয়েশিয়ার ইতিহাসেও এটা সবচেয়ে বেশি পাম অয়েল উৎপাদনের রেকর্ড। থাইল্যান্ড, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, পাপুয়া নিউগিনির পাম অয়েল উৎপাদন খাতেও প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে।
তবে বাড়তি উৎপাদন এসব দেশের পাম অয়েল উৎপাদনকারীদের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে না। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ মৌসুমে পাম অয়েলের বৈশ্বিক ব্যবহার দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো কমে আসতে পারে। মূলত পাম অয়েলের শীর্ষ আমদানিকারক দেশ ভারত, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় পণ্যটির আমদানি প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে আসা এ পরিস্থিতির মূল কারণ। এবার ভারতে পামসহ বিভিন্ন তেলবীজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে দেশটিতে পাম অয়েলের নিজস্ব উৎপাদন বেড়ে আমদানি কমে আসতে পারে। এ সম্ভাবনা থেকে এরই মধ্যে পাম অয়েলের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। অন্যদিকে ইইউভুক্ত দেশগুলো পরিবেশসংক্রান্ত ইস্যুতে পাম অয়েলের আমদানি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৮ সালে এসব দেশে পাম অয়েলের সম্মিলিত আমদানি ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ কমে ৬৫ লাখ টনে নেমে এসেছে। এ সময় চীনে আমদানি হয়েছে সাকল্যে ৫৮ লাখ টন পাম অয়েল।
ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ভোজ্যতেল বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আদানি উইলমার লিমিটেডের পরিচালক অতুল চতুর্বেদি বলেন, পাম অয়েলের বাড়তি উৎপাদন সম্ভাবনা ভারতের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেবে। চীন ও ইইউভুক্ত দেশগুলোতেও অনেকটা একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। ফলে আগামী দিনগুলোয় আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম কমে আসতে পারে। এ পরিস্থিতি বৈশ্বিক পাম অয়েল শিল্পে বড় ধরনের সংকটের জন্ম দিতে পারে।
সিআইএমবি বিনিয়োগ ব্যাংকের এক নোটে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক পাম অয়েল শিল্পে সম্ভাব্য সংকটকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিসর, ফিলিপাইন ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলো। দু-আড়াই মাসের মধ্যে এসব দেশে রোজা শুরু হবে। ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশগুলো পাম অয়েলের আমদানিও বাড়াবে। এ সময় আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম তুলনামূলক কম থাকলে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সামনে স্বল্প ব্যয়ে পণ্যটির আমদানি বাড়ানোর সুযোগ নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে এসব দেশ তুলনামূলক কম দামে অতিরিক্ত পাম অয়েল আমদানি করতে শুরু করলে মে-জুন নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দামে গতি ফিরতে পারে।