অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হওয়ার কারনে এশিয়ার দেশগুলোয় সস্তা জ্বালানির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। চাহিদা পূরণে এ অঞ্চলের দেশগুলো আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহারে ঝুঁকেছে। এর প্রভাব পড়ছে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদায়। এশিয়ার দেশগুলোয় বাড়তি ব্যবহারের জের ধরে সর্বশেষ ২০১৮ সালে এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেড়ে ৩১ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে। এলএনজিবাহী কার্গো পরিবহন প্রতিষ্ঠান গ্যাসলগের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর রয়টার্স ও মেরিন লিংক।
মোনাকোভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ২৮ কোটি ৮০ লাখ টন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ৩০ লাখ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। সে হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা আড়াই কোটি টন বেড়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে চীনের এলএনজি খাতে। বিদায়ী বছরে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেড়ে ৫ কোটি ৪০ লাখ টনে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বেড়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ টন।
এ সময় অভ্যন্তরীণ চাহিদার সিংহভাগ আমদানি করা এলএনজি দিয়ে পূরণ করেছে বেইজিং। বিদায়ী বছরে চীনা আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সব মিলিয়ে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি। এর মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালে চীন বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় দক্ষিণ কোরিয়াকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। মূলত মাত্রাতিরিক্ত পরিবেশদূষণ প্রতিরোধে কয়লার বদলে এলএনজি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম বিস্তৃত করা, গৃহস্থালি ও শিল্প উৎপাদনে ব্যবহার বাড়তে থাকায় চীনের বাজারে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদায় প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে।
চীন ছাড়াও বিদায়ী বছরে দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মেক্সিকোর এলএনজি চাহিদায় বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে। বাংলাদেশ ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশ এলএনজি ব্যবহারকারী ও আমদানিকারকের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক উড ম্যাকেঞ্জির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ৬০ লাখ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। এ সময় জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত বৈশ্বিক চাহিদার ৭০ শতাংশই ব্যবহার করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো। ২০২৫ সাল নাগাদ এসব দেশে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা পূরণে বর্তমানের তুলনায় অতিরিক্ত ১৪ কোটি ৮০ লাখ টন এলএনজি প্রয়োজন হতে পারে।
চলতি বছর শেষে বৈশ্বিক এলএনজি বাণিজ্যে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় থাকতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ডাচ শেল। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ৩২ কোটি ৭০ লাখ টন। চলতি বছর শেষে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৩৫ কোটি ৪০ লাখ টনে। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা বাড়তে পারে ২ কোটি ৭০ লাখ টন। ২০২০ সাল নাগাদ জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা আরো বেড়ে ৩৮ কোটি ৪০ লাখ টনে পৌঁছতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গ্যাসলগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক তিন দেশ জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যবহার বৃদ্ধি আগামী দিনগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। একই সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের দেশগুলোয় এলএনজির বাড়তি চাহিদা জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে। ফলে ২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বর্তমানের তুলনায় চাঙ্গা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।