বিদায়ী বছরে শ্রীলংকায় প্রতিকূল আবহাওয়ার কারনে চা উৎপাদন খাতে মন্দাভাব বজায় ছিল। উৎপাদন ১ শতাংশ কমে যাওয়ায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে দেশটির চা খাতসংশ্লিষ্টরা। চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে চলতি বছর পানীয় পণ্যটির উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। নানামুখী প্রচেষ্টার ফলে ২০১৯ সাল শেষে শ্রীলংকায় চায়ের সম্মিলিত উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়ে ৩১ কোটি কেজি ছাড়িয়ে যেতে পারে। শ্রীলংকা সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি এ লক্ষ্যের কথা জানানো হয়েছে। খবর সিনহুয়া ও ডেইলি মিরর।
শ্রীলংকা বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ চা উৎপাদনকারী দেশ । দেশটির মিনিস্ট্রি অব প্লান্টেশন ইন্ডাস্ট্রিজের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে শ্রীলংকায় সব মিলিয়ে ৩২ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে বছরজুড়ে প্রতিকূল আবহাওয়া বজায় থাকায় এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে শ্রীলংকায় সব মিলিয়ে ৩০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ শতাংশ কম। সে হিসাবে বিদায়ী বছরে শ্রীলংকায় লক্ষ্যের তুলনায় ১ কোটি ৭০ লাখ কেজি কম চা উৎপাদন হয়েছে।
চলতি বছরে এসে উৎপাদন খাতে বিদ্যমান এ মন্দাভাব কাটানোর চেষ্টা করছেন শ্রীলংকার চা খাতসংশ্লিষ্টরা। দেশটির প্লান্টেশন ইন্ডাস্ট্রিজ-বিষয়ক মন্ত্রী নবীন দিশানায়ক জানান, ২০১৯ সালে শ্রীলংকায় সব মিলিয়ে ৩১ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ২০১৯ সাল শেষে দেশটিতে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বাড়ছে। অর্থাৎ ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে শ্রীলংকায় অতিরিক্ত ২০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হতে পারে।
এ বিষয়ে নবীন দিশানায়ক বলেন, ২০১৮ সালে আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন বাগানে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকরা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। এসব কারণে চায়ের সম্মিলিত উৎপাদন আগের তুলনায় কমে গেছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আবহাওয়া চা উৎপাদনের অনুকূলে রয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ অনেকটাই কমে এসেছে। এসব কারণে বছর শেষে পানীয় পণ্যটির সম্মিলিত উৎপাদন বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে।
শ্রীলংকা বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চা রফতানিকারক দেশ। চায়ের মোট বৈশ্বিক রফতানির ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এককভাবে জোগান দেয় শ্রীলংকা। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে চা রফতানি আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে শ্রীলংকার রফতানিকারকরা মোট ২ কোটি ৩৬ লাখ কেজি চা রফতানি করেছে। ২০১৮ সালের একই সময়ে দেশটি থেকে সব মিলিয়ে ২ কোটি ৯ লাখ কেজি চা রফতানি হয়েছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শ্রীলংকা থেকে পানীয় পণ্যটির রফতানি কমেছে ২৬ লাখ ৭০ হাজার কেজি। এ সময় চা রফতানি বাবদ দেশটির রফতানিকারকরা সব মিলিয়ে ২ হাজার ১০ কোটি ডলার আয় করেছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে চা রফতানি করে শ্রীলংকা মোট ১ হাজার ৭১০ কোটি ডলার আয় করেছিল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চা রফতানি বাবদ শ্রীলংকার আয় বেড়েছে ২৯০ কোটি ডলার।
চা রফতানি খাতের এ চাঙ্গাভাব ধরে রাখতে আগ্রহী শ্রীলংকা সরকার। এ বিষয়ে নবীন দিশানায়ক বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে শ্রীলংকার চায়ের চাহিদা ক্রমে বাড়ছে। আমরা এ বাজার হারাতে চাই না। ক্রমবর্ধমান বাজার ধরে রাখতে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চায়ের বিপণন ব্যবস্থা আরো জোরদারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিদ্যমান বাজারে রফতানি বাড়ানো ও নতুন বাজার খোঁজার লক্ষ্যে চায়ের বৈশ্বিক ব্র্যান্ডিংয়ের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে শ্রীলংকা সরকার। এর অংশ হিসেবে আগামী মে মাসে চীনে সিলন চায়ের ডিজিটাল ক্যাম্পেইন শুরু হচ্ছে। সেপ্টেম্বর নাগাদ রাশিয়া, জার্মানি, ইউক্রেন ও জাপানে এ প্রচারণা শুরু হবে। পরবর্তীতে এ প্রচারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হবে।