এশিয়ার বাজারে গত ১৩ সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিকভাবে এলএনজির দাম কমতির দিকে রয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহেও জ্বালানি পণ্যটির দামে মন্দাভাব বজায় ছিল। এ সময় প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (২৭ দশমিক শূন্য ৯৬ ঘনমিটার) এলএনজির গড় দাম ৫ ডলারের নিচে নেমে আসে, যা ২০১৬ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্ন। চলতি বছরের শুরু থেকে জাপান-চীনসহ শীর্ষ ব্যবহারকারী দেশগুলোয় চাহিদা কাঙ্ক্ষিত হারে না বাড়া জ্বালানি পণ্যটির দরপতনের পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। খবর রয়টার্স ও মার্কেট ওয়াচ।
এশিয়ার বাজারে সর্বশেষ সপ্তাহে আগামী মে মাসে সরবরাহের চুক্তিতে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজির গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৪ ডলার ৬৫ সেন্টে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৮০ সেন্ট কম। এর মধ্য দিয়ে টানা ১৩ সপ্তাহ ধরে জ্বালানি পণ্যটির দামে মন্দাভাব বজায় থাকল। একই সঙ্গে ২০১৬ সালের মে মাসের পর গত সপ্তাহে এশিয়ার বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দাম সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। ওই সময় এশিয়ার বাজারে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজির গড় দাম ৪ ডলারে নেমে এসেছিল।
সর্বশেষ সপ্তাহে জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়াসহ শীর্ষ ভোক্তা দেশগুলোয় এলএনজির সরবরাহ না হওয়ায় জ্বালানি পণ্যটির দাম কমে ৫ ডলারের নিচে নেমে এসেছে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা। এ সময় পূর্ব এশিয়ার উপকূল থেকে মাত্র দুটি এলএনজিবাহী কার্গো রওনা হয়েছে। দুটি চালানেরই গন্তব্য ভারত। প্রথম কার্গোটিতে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ভিতল গ্রুপ ভারতে এলএনজি রফতানি করেছে, যা মে মাসের শুরুর দিকে দেশটির পশ্চিম উপকূলে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এ চালানে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজির দাম পড়েছে ৪ ডলার ৫৫ সেন্ট। অন্য চালানটি মে মাসের শেষ নাগাদ ভারতের গুজরাট বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এতে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজির দাম পড়েছে ৪ ডলার ৭৫ সেন্ট।
এদিকে ইউরোপের বাজারে বেচাকেনা বেশি হলেও এলএনজির দাম কমতির দিকে রয়েছে। উত্তর-পশ্চিম ইউরোপ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৫৪ কার্গো এলএনজি রফতানি হয়েছে। মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ চালানে। এ সময় এ অঞ্চল থেকে আশপাশের দেশগুলোয় ৪২ লাখ ৪০ হাজার টন এলএনজি রফতানি হয়েছে। এর পরও জ্বালানি পণ্যটির দাম খুব একটা বাড়েনি। সর্বশেষ সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের বাজারে মে মাসে সরবরাহের চুক্তিতে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজি বিক্রি হয়েছে ৪ ডলার ৯৮ সেন্টে। মূলত শীত মৌসুম শেষ হলেও এশিয়ার দেশগুলোয় চাহিদা কাঙ্ক্ষিত হারে না বাড়ায় ইউরোপের বাজারে এলএনজির দাম তুলনামূলক কম রয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ ২০১৮ সালে এশিয়ার দেশগুলোয় বাড়তি ব্যবহারের জের ধরে এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেড়ে ৩১ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এলএনজিবাহী কার্গো পরিবহন প্রতিষ্ঠান গ্যাসলগ। মোনাকোভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ২৮ কোটি ৮০ লাখ টন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ৩০ লাখ টনে, যা আগের বছরের
তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা ২ কোটি ৫০ লাখ টন বেড়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে চীনের এলএনজি খাতে। বিদায়ী বছরে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেড়ে ৫ কোটি ৪০ লাখ টনে পৌঁছে গেছে।
অন্যদিকে চলতি বছর শেষে বৈশ্বিক এলএনজি বাণিজ্যে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় থাকতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ডাচ শেল। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ৩২ কোটি ৭০ লাখ টন। চলতি বছর শেষে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৩৫ কোটি ৪০ লাখ টনে। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা বাড়তে পারে ২ কোটি ৭০ লাখ টন। ২০২০ সাল নাগাদ জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা আরো বেড়ে ৩৮ কোটি ৪০ লাখ টনে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।