ফেসবুক স্ট্যাটাসে খালেদার দেশে ফেরা!

আপডেট: ২০১৫-১১-১১ ১০:৩৬:১৯


Khaledaবিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে ব্যক্তিগত সফরে রয়েছেন। তার এ সফরেও রাজনীতিকে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ক্ষমতাসীনরা এ সফর নিয়ে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ-সংশয় প্রকাশ করছেন। তিনি কবে দেশে ফিরবেন এ ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা না হলেও ফেসবুকে তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল নিয়মিত স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। জানাচ্ছেন নানা তথ্য।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে খালেদা জিয়া লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার লন্ডন যাওয়ার তারিখ  যেমন বারবার পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি দেশে ফেরা নিয়েও নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

খালেদা জিয়ার সফরগুলোতে সাধারণত তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এবং প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল সঙ্গী হলেও এবার তা দেখা যায়নি। খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার পর শিমুল বিশ্বাস বা মারুফ কামাল খান সোহেলকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোথাও দেখাও যায়নি।

তবে সম্প্রতি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে নানা তথ্য পোস্ট করছেন।

বিএনপি থেকে শমসের মবিন চৌধুরী অবসর নেয়ায় মারুফ কামাল খান সোহেল তার ফেসবুকে বলেছেন, ‘কর্মচারী টাইপের কারো সঙ্গে দ্বন্দ্বে হয়তো তিনি পদত্যাগ করেছেন।’ অবশ্য এ ব্যাপারে শমসের মবিন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘যে বলছে এটা তার কাছে জিজ্ঞেস করেন। আমি এগুলো মনিটরিং করি না।’

পরবর্তীতে গত ৩০ অক্টোবর মারুফ কামাল খান খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে স্ট্যাটাস দেন। তাতে তিনি লেখেন, ১০ নভেম্বর খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার কথা।

এ নিয়ে তিনি ৭ নভেম্বর রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করেছেন। লিখেছেন ‘বর্তমানে লন্ডনে চিকিৎসাধীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা চিকিৎসকের পরামর্শে ক’দিন পিছিয়েছে। চিকিৎসকের ছাড়পত্র পাওয়া সাপেক্ষে তাঁর ১০ নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরে আসার কথা ছিল। গত ৪ নভেম্বর চিকিৎসকের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। ডাক্তার তাঁকে আরো কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। লন্ডন সফরে যাবার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের একটি চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন তাঁর অপর চোখ এবং হাঁটুর চিকিৎসা চলছে। তিনি মোটামুটি সুস্থ আছেন। বর্তমানে তাঁর দেশে ফেরার ব্যাপারে এমিরেটস এয়ারলাইন্সে বুকিং পরিবর্তন করে ১৬ নভেম্বর পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। চিকিৎসকের ছাড়পত্র পেলে বেগম খালেদা জিয়া ওই তারিখে দেশে ফিরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।’

তবে চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শাইরুল কবীর খান বাংলামেইলকে বলেছেন, ‘ম্যাডামের দেশে ফেরার তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হলে সবাই জানতে পারবেন।’

মারুফ কামাল খানের ফেসবুক স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে শাইরুল কবীর বলেন, ‘আমি ফেসবুক ব্যবহার করি না, তাই এ বিষয়ে বলতে পারছি না।’

চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা নিয়ে প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেলের ফেসবুক পোস্টের তথ্য প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বাংলামেইলের প্রশ্নের জবাবে দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘চেয়ারপারসনের দেশে ফেরার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’

চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা নিয়ে ফেসুবকে দেওয়া তথ্য সম্পর্কে মারুফ কামাল খান সোহেল ফেসবুক ইনবক্সে এ প্রতিবেদককে বলেন, চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা নিয়ে যে তথ্য তিনি জানেন তা-ই তিনি পোস্টে উল্লেখ করেছেন।

শাইরুল কবীর খানের দেয়া তথ্য উল্লেখ করে মারুফ কামালের কাছে জানতে চাই প্রেস উইংয়ে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে কি না। তিনি বলেন, ‘আমি দুজন অ্যাসিট্যান্ট নিয়ে কাজ করি। তারা আমার থেকে শুনেই কাজ করে।’

মারুফ কামাল খান সোহেলকে নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে যে তিনি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেন।

তবে এটিকে ভিত্তিহীন দাবি করে সোহেল বলেন, ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার প্রশ্নই আসে না। সিদ্ধান্ত হয় দলীয় ফোরামে। আমি সেখানে থাকি না। আমি সেক্টরে সুনির্দিষ্ট কাজ করি। ম্যাডামের বক্তব্য-বিবৃতির খসড়া করি, তার মিডিয়া কাভারেজ দেখি।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বিএনপি বিটের প্রতিবেদকদের জানার কথা। যারা জানে না তারা তাদের মতো করে বলতে পারে।’

আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য না দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়ায় গুঞ্জন রয়েছে চেয়ারপারসনের অফিসের সঙ্গে সোহেলের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য না দিয়ে তার ব্যক্তিগত আইডি থেকে চেয়ারপারসনের দেশে ফেরার তথ্য দিচ্ছেন।

দায়িত্ব সংকুচিত হয়েছে কি না বা চেয়ারপারসনের অফিসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল বলেন, ‘আমি যেভাবে কাজ করতাম সেভাবেই করি। ম্যাডামের বক্তব্য-বিবৃতির খসড়া করা এবং মিডিয়া কাভারেজের দায়িত্ব আমি পালন করি। এখন তিনি দেশে নেই। অফিসে আমার কাজও তেমন নেই।’

গুঞ্জন রয়েছে, ভারতরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লন্ডন সফরের অপেক্ষায় আছেন বেগম খালেদা জিয়া। মোদির সঙ্গে বৈঠক শেষ করে আগামী সপ্তাহ নাগাদ দেশে ফিরবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।