গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৩-২৭ ১০:৪৪:৪১


গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য রোধে এবং যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। রাজধানীতে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এ সেল মাঠে নামবে বলে জানা গেছে।

সেলের সদস্যরা সপ্তাহের ৫ দিন রাজধানীর প্রতিটি পয়েন্টে গিয়ে তদারকি করবেন। তারা যাত্রী সেজে গণপরিবহনে ভ্রমণ করবেন। এ সময় ভাড়া ও যাত্রীসেবা নিয়ে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা কোনো ধরনের নৈরাজ্য করলে পরিবহনের মালিক, চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করা হবে।

আপাতদৃষ্টিতে উদ্যোগটি ভালো। তবে অতীতে গণপরিবহন খাতে মামলা ও জরিমানা করে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়নি। তাই ভাড়া নৈরাজ্য রোধে মনিটরিং সেলের কার্যক্রম কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

বস্তুত রাজধানীসহ দেশের গণপরিবহন খাতে যে অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে তার নজির নেই। দেশে গণপরিবহন ব্যবস্থায় সিটিং সার্ভিস নামে আলাদা কোনো সেবার কথা বলা নেই। তবু যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেয়ার জন্য নানা নামে ব্যবসা করছেন পরিবহন মালিকরা। সরকার একবার গণদাবির মুখে সিটিং বাস সার্ভিস বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী তখন বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, পরিবহন নেতারা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর! তাই প্রশ্ন জাগে, পরিবহন নেতারা কি তাহলে রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি প্রভাবশালী? এমনকি যাত্রীদের শায়েস্তা করতে মাস্তান ভাড়া করার ঘটনাও ঘটে থাকে। তারা বাসে ও বিভিন্ন স্টপেজে যাত্রীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, এমনকি মারধর করতেও পিছপা হয় না। এককথায় যাত্রীরা পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকদের হাতে পুরোপুরি জিম্মি হয়ে আছেন।

যাত্রীরা জানেন, রাজধানীতে বেশিরভাগ বাস কোম্পানি গণহারে লোকাল যাত্রী তুললেও ভাড়া আদায় করা হয় সিটিং সার্ভিস হিসেবে। ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি সিটের পেছনে ভাড়া আদায় করা হয়ে থাকে তিন-চারবার করে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে রীতিমতো জোচ্চুরি চলছে। সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য নিয়ে সমালোচনার মুখে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিআরটিএ ২০১৭ সালের ৩ মে আট সদস্যের একটি কমিটি করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছিল।

এ কমিটি ২৬টি সুপারিশ জমাও দিয়েছিল। এসব সুপারিশের মধ্যে ছিল শর্তসাপেক্ষে সিটিং সার্ভিস রাখা, বাসে যাত্রী তোলা নিয়ে রেষারেষি এবং যত্রতত্র বাস থামানো বন্ধ করার মতো পদক্ষেপ। কিন্তু সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। তাই সড়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে মূল সমস্যার দিকে সরকারের তেমন মনোযোগ নেই, মামলা ও জরিমানার দিকেই তাদের আগ্রহ বেশি। এভাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতা, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রয়াস ছাড়া এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে সবার আগে দরকার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কারণ পরিবহন খাতটি সবসময় রাজনৈতিক প্রভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এর পরিবর্তে এর নিয়ন্ত্রণভার পুরোপুরি কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অর্পণ করতে হবে। তবেই বন্ধ হতে পারে ভাড়া নৈরাজ্যসহ গণপরিবহন খাতের অরাজকতা। সরকার এ লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।