এসিআইকে লোকসানের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে তদন্ত কমিটি
:: আপডেট: ২০১৯-০৫-২২ ১০:৫৩:২৮
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআই লিমিটেডের লোকসান নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের মনে। ফলে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন তদন্ত করার জন্য বিএসইসি ও ডিএসইকে চিঠি দিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। চিঠিকে কেন্দ্র করে কমিটিও করেছে ডিএসই।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপ্রতি সিদ্দিকুর রহমানকে প্রধান করে গত ( ১২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ কমিটি করা হয়েছে। কমিটি প্রথম বৈটক করেছে গত ( ১৭ ফেব্রুয়ারি)। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানিটির কাছে লোকসানের ব্যাখ্যা চেয়ে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চিঠি দিয়েছে কমিটি। চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই সংক্রান্ত ব্যাখ্যা বা প্রতিদেন দিতে বলেছে কমিটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটিরে একজন সদস্য সানবিডিকে বলেন, তদন্ত কমিটি ডিএসইর কাছে যে তথ্য চেয়েছিলো, তা তারা জমা দিয়েছে। বাড়তি তথ্যের জন্য কোম্পানিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিনি চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়তে
সাড়ে ৩৭ লাখ শেয়ার বিক্রয়যোগ্য হচ্ছে সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালসের
বাজারে গতি না আসলে শুরু হচ্ছে না নতুন কোম্পানির লেনদেন
প্রসঙ্গত, কোম্পানিটি তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসিআই লজিস্টিক লিমিটেডকে (স্বপ্ন) গত ১০ বছর ধরে তার রিজার্ভ থেকে লোকসানের বিপরীতে ভর্তুকি দিচ্ছে এসিআই। এ কারণে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে নানা ধরনের সন্দেহ ও কোম্পানির মালিকপক্ষের প্রতি আস্থায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে সমাপ্ত চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর’ ১৮) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে কোম্পানিটি ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লোকসান দেখায়। আর শেয়ার প্রতি লোকসান দেখানো হয় ৭৮ পয়সা। অথচ আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল। সে বছর ইপিএস দেখানো হয়েছিল ৫ টাকা ৪৪ পয়সা। এসিআই-এর মতো ব্লুচিপ কোম্পানির এই লোকসানের বিষয়টি পুঁজিবাজার অঙ্গনে বির্তক সৃষ্টি করে। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আবেদন জানানো হয়।
এসিআই লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, পাঁচটি কারণে কোম্পানিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণগুলো হচ্ছে- ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, ব্যাংক ঋণের সুদ হার বৃদ্ধি, সহযোগী কোম্পানিগুলো থেকে লভ্যাংশ প্রাপ্তি কমে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি এবং আয়কর খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়া।
টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কাঁচামাল, মোড়কজাত করার উপকরণ এবং সম্পূর্ণ তৈরি পণ্য আমদানিতে কোম্পানিটিকে আগের চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এসব পণ্যের জন্য কোম্পানিটিকে ব্যাপকভাবে বিদেশি বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয়।
গত প্রান্তিকের শুরু থেকে ব্যাংক ঋণের সুদ হার বেশ ঊর্ধ্বমুখী। এটি কোম্পানির মুনাফার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আলোচিত প্রান্তিকে অর্থায়ন তথা ঋণের সুদ বাবদ এসিআই লিমিটেড আগের বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেশি ব্যয় করেছে বা করতে হয়েছে। উল্লিখিত প্রান্তিকে অর্থায়ন ব্যয় বাবদ কোম্পানিটির ৭৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আগের বছর একই প্রান্তিকে এই খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ২১ লাখ টাকা।
বেশ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের কোম্পানি রয়েছে এসিআই লিমিটেডের। এছাড়াও এর রয়েছে কয়েকটি অ্যাসোসিয়েট কোম্পানি। এসিআইয়ের মুনাফার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে এসব কোম্পানি থেকে। কিন্তু আলোচিত প্রান্তিকে এসব কোম্পানি থেকে ২০ শতাংশ কম আয় এসেছে এসিআইয়ের ঘরে।