ভারতে যে পরিমাণ ভুট্টার উৎপাদন হয় তার উল্লেখযোগ্য অংশই অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে ব্যবহার করা হয়। নিজস্ব চাহিদা পূরণের পর অবশিষ্ট ভুট্টা রফতানি করে দেশটি। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলো ও আফ্রিকার কিছু দেশ ভারতীয় ভুট্টার প্রধান ক্রেতা। তবে এসব দেশের জন্য দুঃসংবাদ শুনিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। প্রতিষ্ঠানটির মতে, ভারত থেকে ভুট্টা রফতানি দিন দিন কমছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালেই ভারতীয় ভুট্টা রফতানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। উৎপাদন ক্রমে কমে আসা ও দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ভারতীয় ভুট্টার রফতানি বাজার আমদানিকারক দেশগুলোর জন্য ধীরে ধীরে অধরা হয়ে উঠছে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
ইউএসডিএর ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভুট্টা উৎপাদন হয়েছিল। এ সময় দেশটিতে কৃষিপণ্যটির উৎপাদন দাঁড়ায় ২ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। তবে এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে ভুট্টা উৎপাদন ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমেছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে দেশটিতে সব মিলিয়ে ২ কোটি ৬০ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। সে হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে বিশ্বের সপ্তম শীর্ষ ভুট্টা উৎপাদনকারী দেশ ভারতে কৃষিপণ্যটির উৎপাদন কমেছে ২৭ লাখ ২০ হাজার টন।
উৎপাদন খাতে বিদ্যমান এ মন্দাভাবের প্রভাব পড়েছে ভারতের ভুট্টা রফতানিতেও। ইউএসডিএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১০ লাখ ৮৯ হাজার টন ভুট্টা রফতানি হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ৮২ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। তবে উৎপাদন কমার জের ধরে বিদায়ী বছরে দেশটি থেকে কৃষিপণ্যটির রফতানি ৫৪ দশমিক ৯ শতাংশ কমে এসেছে। ২০১৮ সালে ভারতীয় রফতানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারে সাকল্যে পাঁচ লাখ টন ভুট্টা রফতানি করেছে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ। সে হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে ভারত থেকে ভুট্টা রফতানি কমেছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার টন। এর আগে ২০১২ সালে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৪৭ লাখ ১১ হাজার টন ভুট্টা রফতানি হয়েছিল। এর পর থেকে ভারতের ভুট্টা রফতানি খাতে তুলনামূলক মন্দাভাব বজায় রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের ভুট্টা রফতানি অর্ধেকে নেমে আসার পেছনে উৎপাদন কমার পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধিও বড় একটি কারণ। গত এক বছরেই ভারতের বাজারে কৃষিপণ্যটির দাম ৭৫-৮০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৮ সালের শুরুতে ভারতের বাজারে প্রতি কেজি ভুট্টার দাম ছিল ১২ রুপি। বর্তমানে ২০-২১ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে মুম্বাইভিত্তিক সাহয়াদ্রি স্টার্চ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশাল মাজিথিয়া বলেন, গত তিন-চার মাসেই ভুট্টার দাম ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। মূলত মহারাষ্ট্রজুড়ে তীব্র খরার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে ভুট্টার দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কৃষিপণ্যটির ন্যূনতম সহায়তা মূল্য (এমএসপি) বাড়িয়ে দেয়ায় ভুট্টার বাজার চাঙ্গা হয়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ার জের ধরে আমদানিকারক দেশগুলোও ভারতীয় ভুট্টা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ মৌসুমে ভারত প্রতি কুইন্টাল ভুট্টার এমএসপি ছিল ১ হাজার ৪২৫ রুপি। প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কৃষকদের আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতে কৃষিপণ্যটির এমএসপি ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়। কেন্দ্র সরকারের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে ভারতে প্রতি কুইন্টাল ভুট্টার এমএসপি দাঁড়ায় ১ হাজার ৭০০ রুপি, যা আগের মৌসুমের তুলনায় কুইন্টালপ্রতি ২৭৫ রুপি বেশি। এটাও ভারতের বাজারে ভুট্টার দাম বাড়িয়ে দেয়ার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
বিশাল মাজিথিয়া বলেন, বাড়তি দামের কারণে বিদেশী ক্রেতাদের কাছে অধরা হয়ে উঠছে ভারতীয় ভুট্টা। কৃষিপণ্যটি ক্রেতাদের আকর্ষণ হারাচ্ছে। ফলে ভুট্টার রফতানি বাজারে বিদ্যমান প্রতিযোগিতায় চীন ও তুরস্কের তুলনায় ক্রমে পিছিয়ে পড়ছেন ভারতীয় রফতানিকারকরা।