বিভিন্ন মূল্যবান ধাতুর বাজারে স্বর্ণের দামে উত্থান-পতন লেগেই আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি বছরের শুরুতেও প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৩০০ ডলারের উপরে ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মূল্যবান ধাতুটির দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ২৯০ ডলারের কাছাকাছি নেমে এসেছে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে চলতি বছর স্বর্ণের গড় দাম নিয়ে বাজার বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিএমও ক্যাপিটাল মার্কেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল শেষে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের গড় দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৩০০ হলারের নিচেই থাকবে। তবে প্যালাডিয়ামের বাজার বর্তমানের তুলনায় আরো চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে। বছর শেষে মূল্যবান ধাতুটির গড় দাম ৪৫ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬০০ ডলারের উপরে অবস্থান করতে পারে। এর মধ্য দিয়ে ধাতুর বাজারে গত বছরের মতো এবারো স্বর্ণের চেয়ে দামি ধাতু হিসেবে রাজত্ব করবে প্যালাডিয়াম। খবর মেটাল বুলেটিন ও রয়টার্স।
কানাডীয় প্রতিষ্ঠান বিএমও ক্যাপিটাল মার্কেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল শেষে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের গড় দাম দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ২৯৩ ডলারে। প্রতিষ্ঠানটির আগের প্রতিবেদনে স্বর্ণের গড় দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছিল। তবে চলতি বছর মূল্যবান ধাতুটির মূল্যবৃদ্ধির গতি শ্লথ হলেও ২০২০ সাল নাগাদ তা আরো বাড়তে পারে। আগামী বছর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের গড় দাম দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৩০৬ ডলারে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে বৈশ্বিক স্বর্ণ উত্তোলন খাতে বিনিয়োগ কমতির দিকে রয়েছে। বর্তমানে এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২০১২ সালের পর্যায়ে নেমে এসেছে। এটা বৈশ্বিক স্বর্ণ শিল্পের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে ছোট ছোট কয়েকটি খনির কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে পারে বিশ্বের শীর্ষ স্বর্ণ উত্তোলনকারী দেশ চীন। এর ফলে আগামী বছর নাগাদ দেশটিতে মূল্যবান ধাতুটির উত্তোলন ২০১৬ সালের পর্যায়ে নেমে আসার জোরাল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী দিনগুলোয় আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই ২০২০ সাল নাগাদ স্বর্ণের গড় দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়াতে পারে।
তবে চলতি বছরজুড়ে মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের শক্তিশালী অবস্থান বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর কোরিয়া, ইরান, ভেনিজুয়েলার সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিরোধ, চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি তুলনামূলক শ্লথ হয়ে আসাসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের বদলে মুদ্রাবাজারে মনোযোগ দেবেন। ফলে ২০১৯ সালে স্বর্ণের গড় দাম কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বাড়বে না। তবে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে স্বর্ণ ক্রয় বাড়িয়ে দিয়েছে রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রাশিয়ার এ নীতি আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবান ধাতুটির দাম কিছুটা বাড়াতে পারে।
এদিকে বিএমও ক্যাপিটাল মার্কেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল শেষে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স প্যালাডিয়ামের গড় দাম ৪৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৬১২ ডলার ৫০ সেন্টে। অন্যদিকে চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স প্লাটিনামের গড় দাম দাঁড়াতে পারে ৮৭৩ ডলার। আগামী বছর নাগাদ ধাতুটির গড় দাম বেড়ে আউন্সপ্রতি ৯০০ ডলার হতে পারে। সে হিসাবে, চলতি বছর শেষে আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে মূল্যবান ধাতু হিসেবে প্যালাডিয়ামের রাজত্ব বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত সরবরাহ সংকটের জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্যালাডিয়ামের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ সংকট কেটে গিয়ে প্যালাডিয়ামের দাম কমে আসতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিএমও ক্যাপিটাল। তবে এটা সহসাই হচ্ছে না। এজন্য বিনিয়োগকারীদের অন্তত ২০২১-২২ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে প্লাটিনামের দামও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যতের স্বর্ণের বাজার।