দার্জিলিং চা উৎপাদনে সংকট কাটছেই না
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-০৪-০৩ ১০:২১:৪৯
২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া গোর্খা আন্দোলনের জের ধরে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পাহাড়ি জেলা দার্জিলিংয়ের চা শিল্প। উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গিয়ে দাম বাড়ে বিশ্বখ্যাত দার্জিলিং চায়ের। বাজার হারায় পণ্যটি। বিদায়ী বছরে দার্জিলিংয়ের চা শিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে। তবে বছরের বড় একটি অংশজুড়ে আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় পানীয় পণ্যটির উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বাড়েনি। চলতি বছরের শুরুতে এসে ফের নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দার্জিলিং টি। এবারের কারণটিও প্রতিকূল আবহাওয়া। ফলে বছর শেষে দার্জিলিং চা উৎপাদন এক-পঞ্চমাংশ কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর ইকোনমিক টাইমস।
দার্জিলিং টি বিশ্বের অন্যতম দামি চা হিসেবে পরিচিত। তুলনাহীন রঙ ও স্বাদের কারণে এখানকার চায়ের খ্যাতি ভারত পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে দার্জিলিং চায়ের তুমুল চাহিদা রয়েছে। বছরে দুটি ধাপে বিশ্বখ্যাত দার্জিলিং চা উৎপাদন হয়। জানুয়ারি-এপ্রিল প্রথম পর্যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ের চা সংগ্রহ করা হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। সে হিসাবে, বর্তমানে দার্জিলিংয়ে চা উৎপাদনের প্রথম পর্যায় চলছে। এ পর্যায়ে পানীয় পণ্যটির উৎপাদনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈরী আবহাওয়া।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এক দশক পর দার্জিলিংয়ে তুষারপাত হয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর এক দফা তুষারপাত হওয়ার পর ফের চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি দার্জিলিংবাসী বরফের দেখা পায়। প্রথম পর্যায় শুরুর সময়ে এ তুষারপাতে চা পাতার কুঁড়ি বের হতে পারেনি। ব্যাহত হয়েছে উৎপাদন। তুষারপাতের পাশাপাশি এবারে দার্জিলিংয়ে শীত বেশি পড়েছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা থাকছে ১৬-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতে তা কমে দাঁড়াচ্ছে ৮-৯ ডিগ্রিতে। মাত্রাতিরিক্ত শীত দার্জিলিংয়ে চা উৎপাদন ব্যাহত করছে।
এ বিষয়ে দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের (ডিটিএ) সাবেক চেয়ারম্যান এসএস বাগারিয়া বলেন, খুব নাজুক পরিবেশে বিশেষ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে উৎপাদন করা হয় বলে স্বাদ ও ঘ্রাণ বিবেচনায় দার্জিলিং চা অনন্য। একই কারণে এ চায়ের দামও বেশি। দার্জিলিং চা উৎপাদনের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রভাবক। বর্তমানে যে তাপমাত্রা রয়েছে, তা চা উৎপাদনে সহায়ক নয়। এত শীতে চা পাতার কুঁড়ি বের হবে না। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে বর্তমানের তুলনায় বাড়তি ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন।
কম তাপমাত্রা ও তুষারপাতের কারণে দার্জিলিংয়ে প্রথম পর্যায়ের চা উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী দিনগুলোয় আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে না এলে ২০১৯ সালে দার্জিলিং চা উৎপাদন এক-পঞ্চমাংশ বা ২০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছে ডিটিএ।
বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দার্জিলিং চায়ের দামও বাড়তে শুরু করেছে। গত বছরের মার্চে বেসরকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি দার্জিলিং চা ১ হাজার ৫০০ রুপিতে বিক্রি হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ২০১৯ সালের মার্চে এসে দার্জিলিং চায়ের দাম দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ রুপিতে। সে হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে পানীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ২ হাজার রুপি।
এসএস বাগারিয়া বলেন, গোর্খা আন্দোলনের মুখে দার্জিলিংয়ের চা শিল্পে রীতিমতো ধস নেমেছিল। উৎপাদন ও সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় চার দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো কলকাতার নিলাম ঘরে দার্জিলিং চা সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। টানা বনধের কারণে বন্ধ হয়ে যায় রফতানি। ফলে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে বাজার হারায় বিশ্বখ্যাত দার্জিলিং চা। এ সংকট কাটিয়ে ওঠার মুখে ফের প্রতিকূল আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জে পড়ল দার্জিলিং চা।
কলকাতা টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিটিএ) সেক্রেটারি জে কল্যাণসুন্দরম বলেন, আন্তর্জাতিক নিলামগুলোয় দার্জিলিং চা সরবরাহ ফের কমতে শুরু করেছে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন কম হওয়ায় পানীয় পণ্যটির সরবরাহও কমছে। দীর্ঘমেয়াদে এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচিরেই দার্জিলিং চা বড় পরিসরে বাজার হারাতে পারে