করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব আইসিএবি ও আইসিএমএবির

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৯-০৪-০৯ ২১:১৫:১০


আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে দেশের হিসাববিদদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত উভয় শ্রেণীর কোম্পানির জন্য পর্যায়ক্রমে করহার কমিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশও (আইসিএমএবি)।

সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব দেয় সংগঠন দুটি। এনবিআরের চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার সভাপতিত্ব করেন। এ সময় এনবিআরের বিভিন্ন বিভাগের সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা প্রয়োজন।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় সূচনা বক্তব্যে আইসিএবির প্রেসিডেন্ট এএফ নেসার উদ্দিন বলেন, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, আইনের বৈপরীত্য পরিহার ও ফাঁকফোকর কমানো, আইনের প্রয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, বিনিয়োগ কার্যক্রমকে অধিকতর উৎসাহ প্রদানের জন্য বাজেটে বেশকিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে আইসিএবি। বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা ও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের জন্য সব ক্ষেত্রে করপোরেট করহার পর্যায়ক্রমে ২ শতাংশ করে কমিয়ে আনা দরকার। টিআইএন নেয়ার পরও রিটার্ন না দেয়া করদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। এনবিআরের গবেষণা সেল শক্তিশালী করা এবং কর আহরণের সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা দরকার।

এ সময় আইসিএবির পক্ষ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য আইসিএবির আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর প্রস্তাবনা তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি এবং ট্যাক্সেশন ও করপোরেট ল কমিটির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে করপোরেট করহার বেশি। ভারত ও চীনের মতো দেশে এ হার কমিয়ে আনা হচ্ছে। আমাদের দেশে বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ২৫ শতাংশ ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিকে ৩৫ শতাংশ হারে এ কর দিতে হয়। এটি বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রত্যাশার বিপরীত। বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে করপোরেট কর কমাতে হবে। এক বছরে অনেক বেশি না কমিয়ে প্রতি বছর ২ শতাংশ হারে কমানোর প্রস্তাব দিচ্ছি আমরা। এতে দীর্ঘমেয়াদে সরকার লাভবান হবে। বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাড়লে রাজস্ব আহরণ বাড়বে।

করহার কমিয়ে পরিধি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মানানসই নয়। কর-জিডিপি বাড়াতে এনবিআর বিদ্যমান করদাতাদের ওপর চাপ দেয়। অতিরিক্ত কর না চাপিয়ে করযোগ্য ব্যক্তিদের করজালে অন্তর্ভুক্ত করে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো যায়।

বাজেট আলোচনায় করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাব করেছে আইসিএমএবিও। সংগঠনটির সভাপতি এম আবুল কালাম মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে করপোরেট করহার প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় বেশি। বিনিয়োগকে উৎসাহী করতে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাবহির্ভূত উভয় কোম্পানির জন্য তা কমাতে হবে। বর্তমানে সর্বনিম্ন করের ক্ষেত্রে তিনটি স্ল্যাব রয়েছে। এটি পরিবর্তন করে একটি সহজতর নিয়ম করতে হবে।

অনুষ্ঠানে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত করা। ব্যক্তিকরদাতাদের সম্পদ করের সীমা ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা করা। মাসিক বেতন ১৬ হাজার টাকা হলেই রিটার্ন দেয়ার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা পরিবর্তন করে ২৫ হাজার টাকা করাসহ আয়কর আইনের বেশকিছু বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব দেয় ঢাকা ট্যাক্সসেস বার অ্যাসোসিয়েশন।

বিভিন্ন সংগঠনের বাজেট প্রস্তাবনার জবাবে মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, আপনাদের পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। ডাবল ও ট্রিপল ট্যাক্সেশনের বিষয়গুলোও নোট নেয়া হয়েছে। দেশের উন্নয়নের জন্য রাজস্ব আহরণ করতে হবে। আমরা কাউকে চাপ দিয়ে রাজস্ব আহরণ করতে চাই না। ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়াতে চাই। করের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য থাকলে তা দূর করা হবে।