৪ হাজার ৩৭০ টনে দাঁড়াতে পারে স্বর্ণের চাহিদা

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৪-০৯ ১০:২৩:০৩


বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি তুলনামূলক শ্লথ হয়ে এসেছে। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ এ শ্লথতার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। ইউরোপে ব্রেক্সিট ইস্যুতে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তাও কাটেনি। একই সঙ্গে উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, ইরান ও ভেনিজুয়েলাকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন করে চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ বিনিয়োগকারীদের মনে উত্কণ্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যতের নিরাপদ বিনিয়োগ বিবেচনা করে স্বর্ণের বাজারে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। এ পরিস্থিতিতে চলতি বছর শেষে মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা আগের বছরের তুলনায় বেড়ে ২০১৫ সালের পর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে যেতে পারে। এর জের ধরে চলতি বছর শেষে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবান ধাতুটির গড় দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। মেটালস ফোকাসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স ও মার্কেট ওয়াচ।

লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মেটালস ফোকাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৩৬৪ টন। চলতি বছর শেষে মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৪ হাজার ৩৭০ টনে। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা বাড়তে পারে ছয় টন। এর মধ্য দিয়ে ২০১৯ সাল শেষে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা ২০১৫ সালের পর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে যেতে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৭১ দশমিক ৭ টন। আর ২০১৬ সালে মূল্যবান ধাতুটির সম্মিলিত বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৩৬২ টন।

চলতি বছর শেষে বিশ্বব্যাপী অলংকার প্রস্তুত খাতে স্বর্ণের সম্মিলিত চাহিদা ২ হাজার ৩৫১ টনে দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মেটালস ফোকাস, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি। এ সময় বিশ্বের দুই শীর্ষ ভোক্তা দেশ ভারত ও চীনের অলংকার খাতে মূল্যবান ধাতুটির চাহিদায় যথাক্রমে ৭ ও ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ সময় মধ্যপ্রাচ্যে স্বর্ণের চাহিদা কমতির দিকে থাকতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল শেষে সরাসরি বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের সম্মিলিত বৈশ্বিক চাহিদা ১ হাজার ৮২ টনে অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অন্যদিকে একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় স্বর্ণের সম্মিলিত চাহিদা দাঁড়াতে পারে ৬০০ টনে। মূলত ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার পরিবর্তন নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের চাহিদা বাড়িয়ে দিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।

মেটালস ফোকাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ভর করে, তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে উত্কণ্ঠা বেড়ে যায়। মুদ্রাবাজার কিংবা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের বাড়তি ঝুঁকি নিতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ উৎস বিবেচনা করে বুলিয়ন মার্কেটে লেনদেন বাড়িয়ে দেন। চলতি বছর এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিই স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা বাড়িয়ে দিতে পারে।

এদিকে ২০১৯ সাল শেষে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবান ধাতুটির দামেও চাঙ্গাভাব দেখা যেতে পারে। মেটালস ফোকাসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর শেষে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৩১০ ডলারে উন্নীত হতে পারে। গত বছর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের গড় দাম ছিল ১ হাজার ২৬৮ ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মূল্যবান ধাতুটির গড় দাম আউন্সপ্রতি ৪২ ডলার বাড়তে পারে। এরই মধ্যে স্বর্ণের দামে চাঙ্গাভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণ ১ হাজার ৩০০ ডলারের উপরে বিক্রি হচ্ছে।