আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর চা উৎপাদনে আবারও রেকর্ডের সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা। গত বছরে মৌসুমের শুরুতে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ, ২০১৮) অনাবৃষ্টির কারণে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে বেশ শঙ্কিত ছিলেন চা ব্যবসায়ীরা। এবার মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টিপাত হওয়ায় রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
দেশে এখন সবমিলিয়ে ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এরমধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় শুধু ৯৩টি চা বাগান আছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে দেশের ১৬৬টি বাগানে চা উৎপাদন হয়েছে আট কোটি ২১ লাখ কেজি। আগের বছর ২০১৭ সালে উৎপাদন হয়েছিল সাত কোটি ৮৯ লাখ কেজি।
২০১৬ সালের মোট উৎপাদন ছিল আট কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার কেজি। তখন বছরজুড়ে চা চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় ছিল। গত তিন বছর চায়ের গড় উৎপাদন ছিল আট কোটি ২০ লাখ কেজি।
২০১৮ সালে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সাত কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (৯ মাসে) দেশে সব মিলিয়ে ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। যার কারণ সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে চা চাষের উপযোগী সুষম বৃষ্টি হওয়ায় বছর শেষে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮৯ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়।
শ্রীমঙ্গলস্থ প্রাইভেট মালিকানাধীন এম রহমান টি ল্যান্ড কোম্পানি এম আর খান চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার মো.জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। ফলন ভালো হলে উৎপাদনে আরেকটি রেকর্ড সৃষ্টি করবে। গত বছর চায়ের যেভাবে মূল্যে ছিল এবারও যদি একই মূল্য পাওয়া যায়, তাহলে চা বাগানের ডেভেলপমেন্ট কাজ করতে সুবিধা হবে। চায়ের মূল্যে সন্তোষজনক হলে প্রফিট মার্জিন ভালো থাকে।’
প্রতিবছর নতুন প্লান্টেশন বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর টি বোর্ডের মেন্ডেটরি হচ্ছে ২.৫ পারসেন্ট। এটার পরও আমরা অতিরিক্ত করার চেষ্টা করি।’
ফিনলে টি কোম্পানির সিলেট বিভাগের ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম শিবলী বলেন,‘এই বছর আমরা সময়মতো বৃষ্টি পেয়েছি। আশা করি আগামী মাসগুলোতে ঠিকমতো বৃষ্টি পেলে চা উৎপাদনে আরেকটি রেকর্ড হবে। আমাদের চা পানে দেশে চাহিদা রয়েছে ৮৫-৯০ মিলিয়ন কেজি। আশা করি, তা পূরণ করতে পারবো।’
চা আমদানি নিয়ে গোলাম শিবলী বলেন, ‘ভারতে থেকে নিম্নমানের চা আমদানি করায় দেশে চায়ের বাজারে বাংলাদেশি চায়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সেদিকে সরকারের সু-নজর থাকলে আমাদের চায়ের গুণগতমান ধরে রাখা সম্ভব।’
এম আর খান চা বাগানের শ্রমিক কানু লাল ও ভাড়াউড়া চা বাগানের সুনিতা বাড়ই বলেন, অন্য বছর এই সময়ে দুই কেজি চা উত্তোলন করা কঠিন হতো। বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার আমরা পাঁচ কেজি চা পাতা উত্তোলন করতে পারছি।’
শ্রীমঙ্গলে চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট (পিডিইউ) সূত্র জানায়, ‘২০০৯ সালে চা শিল্পের উন্নয়নে নেওয়া কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চা চাষের আওতা বাড়ানো হয়। প্রথম ধাপে বান্দরবানের রুমায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) বিভিন্ন উপকেন্দ্রে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষিদের জন্য ক্ষুদ্রায়তন চা আবাদ, প্লাকিং, রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন বিষয়ে এবং দেশের চা বাগানগুলোর ব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়মিত চলছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিকূল আবহাওয়া কাটিয়ে চা উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।’