লিচুর ছোট্ট গুটিতে রঙিন স্বপ্ন চাষিদের
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-০৪-২২ ১১:১২:০১
চলতি মৌসুমে ফুল থেকে কেবল গুটিতে পরিণত হয়েছে লিচু। রাজশাহীর চাষিরা সবুজ সেই গুটিতেই রঙিন স্বপ্ন দেখছেন। তারা বলছেন, ফুল থেকে গুটি হতে খানিকটা সাহায্য করেছে হালকা বৃষ্টি। বৃষ্টিতে প্রাণবন্ত রয়েছে লিচুর গুটিগুলো। অন্য বছরের মতো এবার অতিরিক্ত তাপমাত্রায় লিচুর গুটি পুড়ে যাচ্ছে না, ঝরেও পড়ছে না। তাই লিচুতে এবার তারা ভালো ফলনেরই আশা করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও ফল গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরাও একই কথা বলেছেন। তাদের বক্তব্য, আবহাওয়া এবার লিচু চাষের উপযোগী। লিচুর ফুল থাকাকালে একবার শিলাবৃষ্টি ছাড়া ক্ষতি হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। সামনের দিনগুলোতে প্রকৃতি সহায় থাকলে লিচুতে মুনাফা করবেন চাষিরা। আর সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যেই বাজারে উঠবে মনজুড়ানো টসটসে লাল লিচু।
রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালি এলাকার লিচুচাষি আনোয়ার হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে তার ৩০টি লিচুর গাছ রয়েছে। এবার লিচুর প্রচুর মুকুল এসেছিল। কিন্তু কিছু ফুল ঝরে পড়েছিল। তারপরেও এখন যে পরিমাণ লিচুর গুটি গাছে রয়েছে সেগুলো শেষ পর্যন্ত ঝরে না পড়লে তিনি লাভবান হবেন। তাই এই মুহুর্তে তিনি লিচু গাছের পরিচর্যায় কোনো ঘাটতি রাখছেন না।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলীম বলেন, সাধারণত হালকা ঠাণ্ডা আবেশে লিচুর ফুল ভালো হয়। আর ফুল ফোটার পর বৃষ্টি না হলে তা ঝরেও পড়ে না। এবার ফুল আসার সময় আবহাওয়া ঠাণ্ডাই ছিল। তখন বৃষ্টিতে কিছু ফুল ঝরে পড়লেও পর্যাপ্ত গুটি এসেছে। অন্য বছরের মতো এবার গুটি রোদে পুড়ে যাচ্ছে না। লিচুর জন্য এখন কেবল তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, জেলায় এবার ৪৮০ হেক্টর জমিতে লিচুবাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে সাড়ে চার টন করে তারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন। প্রতিটি বাগানের গাছগুলোতে এখন থোকায় থোকায় লিচুর সবুজ গুটি ঝুলে আছে। যার শোভায় সবুজ প্রকৃতি আরও সবুজ হয়ে উঠেছে। তারা আশা করছেন লিচুর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
শামসুল হক বলেন, গত কয়েক বছরে আমের পাশাপাশি লিচু চাষ করেও জেলার অনেক চাষি স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন। তাই লিচুর নতুন নতুন বাগান গড়ে উঠছে। বাগান ছাড়াও বসতবাড়িতে দেশি লিচুর পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল চায়না-৩, বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচু চাষ হচ্ছে। এখন জেলার পবা, গোদাগাড়ী, বাগমারা, বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলায় আগের চেয়ে বেশি লিচু চাষ হচ্ছে। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগরীর ছোটবনগ্রাম, কাটাখালী, বুধপাড়া, রায়পাড়া, কাশিয়াডাঙ্গা ও বুলনপুর এলাকাতেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ শুরু হয়েছে।