বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের বিষফোড়া খেলাপি ঋণ। এই খেলাপি ঋণ তিন প্রকার। সাব-স্ট্যান্ডার্ড; ডাউটফুল ও ব্যাড ডেট বা মন্দ ঋণ। অনাদায়ী ঋণের মেয়াদ অনুযায়ী খেলাপি ঋণ কে এই তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। আর এই মেয়াদের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং নীতি ও প্রবিধি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে এক সার্কুলার জারি করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন ২০১৯ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, সকল প্রকার কনটিনিউয়াস ঋণ, ডিমান্ড ঋণ, ফিক্সড টার্ম লোন অথবা যেকোন ঋণের কিস্তি তিন মাসের বেশি কিন্তু নয় মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণ। আগে তিন মাসের বেশি অনাদায়ী থাকলে সাব-স্ট্যান্ডার্ড গণনা করা হতো।
নয়মাসের বেশি কিন্তু ১২ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা ডাউটফুল লোন বা সন্দেহজনক ঋণ হবে। আগে ৬ মাসের বেশি ৯ মাসের কম অনাদায়ী ঋণকে ডাউটফুল লোন বা সন্দেহজনক ঋণ বলা হতো।
আর ১২ মাসের বেশি অনাদায়ী ঋণ ব্যাড ডেট বা মন্দ ঋণ হবে। আগে ৯ মাসের বেশি অনাদায়ী ঋণ মন্দ ঋণ হিসেবে বিবেচিত হতো।
তবে সার্কুলারে সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের একটা অংশ খেলাপি ঋণ হিসেবে দেখাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণ খেলাপি ঋণ হিসেবে গণ্য করা হতো না।
ব্যাংকগুলোকে সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের ২৫ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশনিং করতে হয়।
এর আগে ঋণ খেলাপিদের জন্য বিশেষ সুযোগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সিদ্ধান্ত মতে, মোট ঋণের মাত্র ২ শতাংশ এককালীন জমা (ডাউন পেমেন্ট) দিয়ে একজন ঋণখেলাপি নিয়মিত গ্রাহক হয়ে যাবেন। বাকি ঋণ শোধ করতে হবে ১২ বছরের মধ্যে। ঋণের সুদহার ১০, ১২ বা ১৫ যা-ই থাকুক না কেন, নেওয়া হবে মাত্র ৭ শতাংশ। আগামী এক মাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে, যা কার্যকর হবে ১ মে ২০১৯ থেকে।
এর আগে ২০১৫ সালে ঋণখেলাপিদের জন্য ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন ১১টি শিল্প গ্রুপের ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করে বড় ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়। তবে সুবিধা পাওয়ার পরও দুটি গ্রুপ ছাড়া আর কেউ টাকা পরিশোধ করছে না।
জানা যায়, ২০০৯ সালের শুরুতে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৮ সাল শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এ ছাড়া অবলোপন ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।