এক গ্রাহককে একাধিক ব্যাংকে ঋণ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৪-২৩ ২০:৪৭:২৪
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একক গ্রাহককে একাধিক ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে একক গ্রাহককে একাধিক ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার প্রবণতা প্রায় চার শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং কার্যক্রম নগর কেন্দ্রীক। যা ব্যাংকিং খাতে বড় ধরণের সমস্যা তৈরি করছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসে ‘ক্রেডিট অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। কর্মশালার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো: আব্দুর রহিম। তিনি ব্যাংকারদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে আরও সর্তক থাকার ওপর জোরারোপ করেন।
ঋণ বিষয়ক এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা। আয়োজনের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে ঢাকার বিআইবিএমে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন পরিচালক (প্রশিক্ষণ) অধ্যাপক ড.শাহ মো. আহসান হাবীব।
বিআইবিএমর কর্মশালাটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিস থেকে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের আঞ্চলিক পর্যায়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের অডিটোরিয়ামে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো: নাছের। ঢাকা বিআইবিএম অডিটোরিয়ামের অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধূরী, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ প্রমুখ।
কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (প্রশাসন ও হিসাব এবং গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড.প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল মোস্তফা, বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র পন্ডিত, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক ড. মো: মোশাররেফ হোসেন এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: জাকির হোসেন।
দেশের ৩২ টি ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন তৈরিতে ব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ধরণের প্রকাশনা, সার্কুলার ইত্যাদি সেকেন্ডারি তথ্যের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।
বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, গ্রামের মানুষ ঋণ কম পাচ্ছে। এতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং কম হচ্ছে। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে নীতি নির্ধারকদের চিন্তা করতে হবে। কিভাবে সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যায়।
সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধূরী বলেন, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকারদের সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। তিনি প্রশিক্ষণের ওপর জোরারোপ করেন।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, খেলাপী ঋণ আদায়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। ঋণ অনুমোদন পর্যায়ে সব জেনেশুনেই গ্রাহককে ঋণ দিলে খেলাপী হওয়ার আশঙ্কা কমবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকদের অধিকাংশই বেনামী ঋণ নেয়। এটি বন্ধ করা প্রয়োজন। যা করা সম্ভব হলে খেলাপী কমে যাবে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত অর্থায়ন খেলাপী ঋণের মূল কারণ। বেনামী ঋণ আগামী দিনের বড় হুমকী হয়ে দাঁড়াবে। টাকা নিলে ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। খেলাপী ঋণ আদায়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আদালত করতে হবে। সেখানে বেঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন।