দেশে বর্তমানে (২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) ৭৫ হাজার ৫৬৩ জন কোটিপতি আমানতকারী। এক বছর আগে (২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) এ সংখ্যা ছিল ৭১ হাজার ৬০০ জন। একবছরের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৯৬৩ জন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের তথ্য নিয়ে তৈরি করা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিন মাসে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ২ হাজার ৭৫১ জন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৭২ হাজার ৮১২ জন। ওই বছরের ডিসেম্বর শেষে কোটিপতি আমানতকারী দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৫৬৩ জনে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৬২ হাজার ৩৮ জন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৬৭ হাজার ৮৭২ জন। ২০১৮ সালের মার্চ শেষে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার ৪৬৩ জন।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৭৫ হাজার হলেও বাস্তবে কোটিপতির সংখ্যা আরও বেশি।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি মানে টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে না, কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। এর ফলে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘কোটিপতিদের একটা বড় অংশ কালো টাকার মালিক। এই কালো টাকার সুবাদে সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণি ধনী হয়ে যাচ্ছে। অন্য শ্রেণি পেছনে পড়ে গরিব থেকেই যাচ্ছে। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালে ডিসেম্বর শেষে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি রয়েছেন এক হাজার ১৪৮ জন। ২০১৭ সালের একই সময়ে এ ধরনের ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৯১১ জন।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকে এককোটি টাকা আমানত রাখা ব্যক্তি রয়েছে ৫৯ হাজার ২২৮ জন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৫৬ হাজার ৯৯ জন। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এক কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ১২৯ জন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না থাকায় ব্যাংকে কোটিপতিদের সংখ্যা বাড়ছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘টাকাওয়ালাদের কাছে ব্যাংকিং খাত এখন জিম্মি।’ এভাবে ব্যাংকে কোটিপতি বেড়ে যাওয়া কোনও ভালো লক্ষণ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা। এই সময় পর্যন্ত পুরো ব্যাংক খাতে হিসাবধারী রয়েছেন ৯ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ২২২ জন।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি রয়েছেন ৩৫৮ জন। ৩৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ২২০ জন। ৩০ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন ৩২২ জন। ২৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৫০৪ জন। ২০ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৯০৬ জন। ১৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ১ হাজার ৩৯৪ জন। ১০ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ২ হাজার ৮৭৯ জন। পাঁচ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৮ হাজার ৬০৪ জন।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচজন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ জনে। জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে (ডিসেম্বর ১৯৮০) এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে। এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৯৪৩ জন। ১৯৯৬ সালের জুনে কোটিপতি ছিলেন দুই হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ১৬২ জনে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৮৭ জনে। ২০০৮ সালে হয় ১৯ হাজার ১৬৩ জন। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ১৩০ জনে। ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা হয় ২৯ হাজার ৫৩৭।