চা সংকটে কেনিয়া, কপাল খুলেছে ভারতীয় চা রপ্তানীকারকদের

সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৫-০৭ ১১:২০:২১


গত বছরে বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল কেনিয়ায়। অনুকূল আবহাওয়া থাকার কারনে এ সময় দেশটিতে চায়ের বাম্পার ফলন দেখা গেছে। তবে এ বছর পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে। সময়মতো বৃষ্টিপাত হয়নি। দেশটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে দেখা দিয়েছে খরা। এর প্রভাব পড়েছে কেনিয়ার চা উৎপাদন খাতে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় চা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দেশটি থেকে পানীয় পণ্যটির রফতানিও কমতির দিকে রয়েছে। সরবরাহ সংকটে কেনিয়ার চায়ের দামও বেড়েছে ১৫ শতাংশ। আর এতেই কপাল খুলছে ভারতীয় চা রফতানিকারকদের। কেনিয়ার রফতানি বাজার সংকুচিত হয়ে আসায় আমদানিনির্ভর দেশগুলো চা আমদানিতে ভারতের প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেছে। এ সময়টায় ভারতে নতুন মৌসুমের চা বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফলে ভারতীয় রফতানিকারকদের তুলনামূলক কম দামে চায়ের ক্রেতা আকর্ষণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আগামী দিনগুলোয় ভারতীয় চায়ের রফতানি বাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। খবর ইকোনমিক টাইমস ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

বিশ্বে চা উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক দেশগুলোর শীর্ষ তালিকায় ভারতের অবস্থান  দ্বিতীয়। পানীয় পণ্যটির বৈশ্বিক রফতানি চাহিদার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এককভাবে যোগান দেয় দেশটি। অন্যদিকে চা রফতানিকারক ও উৎপাদনকারী দেশের শীর্ষ তালিকায় কেনিয়ার অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। বৈশ্বিক রফতানি চাহিদার ১৮ দশমিক ২ শতাংশ চা সরবরাহ করে আফ্রিকার দেশটি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ও কেনিয়া থেকে চা রফতানিতে কোনো পরিবর্তন হলে তা সামগ্রিক বৈশ্বিক বাজারের ওপরই প্রভাব ফেলে। রফতানি কমলে দাম বাড়ে, রফতানি বাড়লে চায়ের দাম কমে যায়।

ভারতীয় চায়ের প্রধান রফতানি গন্তব্য মিসর, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। কেনিয়া থেকে সরবরাহ ক্রমেই কমতির দিকে থাকার কারণে এসব দেশে ভারতীয় চায়ের চাহিদা বেড়েছে। ফলে আগামী দিনগুলোয় এসব দেশে ভারত থেকে পানীয় পণ্যটির রফতানি আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। বিপরীত চিত্র দেখা যেতে পারে কেনিয়ার বাজারে।

এ বিষয়ে ম্যাকলিয়ড রাসেল ইন্ডিয়ার পরিচালক ও ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান আজম মোনেম জানান, গত বছর কেনিয়ায় রেকর্ড ৪৯ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। দেশটি থেকে পানীয় পণ্যটির রফতানিতেও এ চিত্রে চাঙ্গাভাব। বাড়তি রফতানির জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে কেনিয়ার চায়ের দাম ছিল নাগালের মধ্যে। তবে চলতি বছর পরিস্থিতি বদলে গেছে। কেনিয়ার চা উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোয় বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। দেখা দিয়েছে তীব্র খরা। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে কেনিয়া থেকে চায়ের রফতানিতে মন্দাভাব দেখা দিতে পারে।

তীব্র খরার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় কেনিয়ার চা শ্রমিকরাও বিপদের মধ্যে রয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, খরার কারণে কেনিয়ায় চা পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলোর উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। এ অবস্থায় দেশটির চা বাগান মালিক ও চা উৎপাদকরা তাদের অর্ধেক শ্রমিককেই ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। দেশটিতে চা উৎপাদনে বিদ্যমান পরিস্থিতি খুব দ্রুত উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা কম। দেশটির আবহাওয়া বিভাগ বলছে, সাধারণত এপ্রিলে বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু এ সময়েও দেশের বেশির ভাগ অঞ্চল শুকনা ছিল। তাপমাত্রা ছিল তুলনামূলক বেশি। চলতি মাসেও কেনিয়ার চা বাগানগুলোয় বৃষ্টির দেখা মিলবে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। ফলে বিদ্যমান প্রতিকূল আবহাওয়া আরো দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আজম মোনেম আরো বলেন, মে-জুন পর্যন্ত কেনিয়ায় শীতকাল। জুলাইয়ে দেশটিতে চা উৎপাদন হয় না। ঠিক এ সময়েই ভারতে মৌসুমের দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎপাদিত চা বাজারে আসে। এ পরিস্থিতি ভারতীয় চা রফতানিকারকদের জন্য বড় একটি সুযোগ। আশা করা হচ্ছে, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতীয় চা রফতানিকারকরা পানীয় পণ্যটির রফতানি বাড়াতে সক্ষম হবেন।

ম্যাকলিয়ড রাসেল ইন্ডিয়ার এক নোটে বলা হয়েছে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি চা ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৪ ডলারের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কেনিয়া থেকে রফতানি কমে গেলে পানীয় পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ৩ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।