বড় ধরনের তারল্য বা নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে দেশের ব্যাংক খাত। চাহিদা অনুযায়ী আমানত সংগ্রহ করতে না পারায় বেশিরভাগ ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, নিয়মিত খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ায় এই সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই সংকট মোকাবিলায় অনেক ব্যাংক ১০ শতাংশের বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করতে চাইলেও গ্রাহকদের সাড়া মিলছে না। ফলে, ব্যাংকের সুদের হার ১৬/১৭ শতাংশে পৌঁছে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও চাহিদামতো ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহ করতে না পারায় ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, তারল্য সংকটের প্রধান কারণ ব্যাংকের ওপর লোকজনের আস্থাহীনতা। তাই ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি প্রতি মাসে কমে যাচ্ছে। এছাড়াও, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ও ব্যাংকের সুদে পার্থক্য এবং নানা কেলেঙ্কারীর কারণে ডিপোজিট (আমানত) কমে যাচ্ছে। আর ডিপোজিট কমলে তারল্য সংকট দেখা দেবে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় প্রসঙ্গে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করতে হবে। এতে করে মানুষের আস্থা ফিরবে এবং আমানত সংগ্রহ বাড়বে। তা না করতে পারলে কোনো লাভ হবে না।
সাবেক এই অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হয়তো সম্ভব হবে না। তবে বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির যে লক্ষ্যমাত্রা থাকে, তা পূরণ হলে বিক্রি বন্ধ করে দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলো আমানতের তুলনায় বেশি ঋণ দিয়ে তা আদায় করতে পারছে না। এতে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। অনেক গ্রাহক এখন ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহ পান না। আবার সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি থাকায় মানুষ সঞ্চয়পত্র কেনার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ফলে, ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না।
তারল্য সংকটের কথা স্বীকার করে নেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমানও। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট রয়েছে— এটা অস্বীকার করা যাবে না। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকের টাকা আটকে গেছে। খেলাপি ঋণ উদ্ধার না হওয়া একটা বড় সমস্যা। এছাড়াও খেলাপিদের নানা সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাবে ব্যাংক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এবিবি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আমানতের ওপর নির্ভরশীল। এটার পাশাপাশি বন্ড মার্কেট, ক্যাপিটাল মার্কেটও দরকার। এছাড়াও, স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। এসব কারণে নানা ঝামেলা হচ্ছে।
উত্তরণের উপায় প্রসঙ্গে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের বন্ড মার্কেট তৈরি করতে হবে। তখন দীর্ঘ মেয়াদে থাকা ঋণ বন্ড বিক্রির মাধ্যমে রিপ্লেস করতে হবে।