দেশের চায়ের আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্রগুলোয় নতুন নিলাম মৌসুম শুরু হয়েছে। ২০১৯-২০ মৌসুমের শুরু থেকেই পানীয় পণ্যটি তুলনামূলক বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এই খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন মৌসুমের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক নিলামে ভালো মানের চায়ের চাহিদা বেশি রয়েছে। এর জের ধরে নিলামে পানীয় পণ্যটির দামও আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে দেশের বাগানগুলোয় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না হলে চলতি মৌসুমজুড়ে দেশীয় নিলামঘরে চায়ের দাম বাড়তির দিকে থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএ) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত দুটি আন্তর্জাতিক চা নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল নতুন মৌসুমের প্রথম নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ২৬৯ টাকায়। আগের মৌসুমের একই নিলামে প্রতি কেজি চা গড়ে ২১৯ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। এ নিলামে ৩৯ হাজার ২২০ প্যাকেটে সব মিলিয়ে ২১ লাখ ৫২ হাজার ৫৩৩ কেজি চা সরবরাহ করা হয়েছিল। আগের মৌসুমের প্রথম নিলামে ২৪ হাজার ৮১১ প্যাকেটে মোট ১৩ লাখ ৬১ হাজার ৬৩৬ কেজি চা সরবরাহ হয়েছিল।
একইভাবে চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় নিলামে ৩৪ হাজার ৩১৫ প্যাকেটে সব মিলিয়ে ১৮ লাখ ৮০ হাজার ৪৬২ কেজি চা সরবরাহ করা হয়েছে, যা আগের মৌসুমের একই নিলামের তুলনায় ১০ লাখ ৭১ হাজার ৯৭৫ কেজি বেশি। সর্বশেষ নিলামে প্রতি কেজি চা বিক্রি হয়েছে গড়ে ২৫০ টাকায়। আগের নিলামের তুলনায় ১৯ টাকা কমলেও আগের মৌসুমের একই সময়ের তুলনায় এ নিলামে বাড়তি দামে চা বিক্রি হয়েছে। মূলত রোজা শুরুর দিন আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ায় মৌসুমের দ্বিতীয় নিলামে ক্রেতা উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। এ কারণে দ্বিতীয় নিলামে চায়ের গড় দাম কিছুটা কমে এসেছে। তবে আগামী নিলামগুলোয় পানীয় পণ্যটির গড় দাম ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিটিটিএ।
চায়ের বাজারে বিদ্যমান চাঙ্গাভাবের কারণ সম্পর্কে কথা হয় ন্যাশনাল ব্রোকার্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক অঞ্জন দেব বর্মণের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাড়তি চাহিদাই চায়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মৌসুমের প্রথম দুটি নিলামে চায়ের সরবরাহ বাড়তির দিকে ছিল। এ সময় সরবরাহ করা চায়ের ৮০ শতাংশ বিক্রি হয়ে গেছে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো মানের চা বেশি কিনেছে। এসব চায়ের দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় নিলামে পানীয় পণ্যটির গড় দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে।
অঞ্জন দেব বর্মণ আরো বলেন, ভালো মানের চায়ের বিষয়ে ক্রেতাদের আগ্রহ রয়েছে। এখন পরবর্তী নিলামগুলোয় কতটা ভালো মানের চা সরবরাহ করা সম্ভব হবে, তার ওপর পানীয় পণ্যটির সম্ভাব্য গড় দাম নির্ভর করবে। সরবরাহ অনেক বেশি হলে দাম কমে আসবে। আর সরবরাহ সীমিত হলে চায়ের গড় দাম বাড়তির দিকে থাকতে পারে। যদিও সামগ্রিক পরিস্থিতিতে দেশীয় বাগানগুলো থেকে ভালো মানের চায়ের সরবরাহ রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর চায়ের ব্যবহার ৪-৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশীয় বাগানগুলো পানীয় পণ্যটির উৎপাদন বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে দেশে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ২ শতাংশের কিছু বেশি। চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্য না থাকায় প্রতি বছরই দেশে চায়ের দাম বাড়ছে। বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পানীয় পণ্যটির আমদানিও প্রায় বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশে চায়ের বাজারে চাঙ্গাভাব আরো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এ কারণে চায়ের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখতে দেশীয় বাগানগুলোয় উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।