শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়নে বিভিন্ন খোলাবাজার থেকে ভেজাল বীজের চারা কিনে কয়েকজন কৃষকের প্রতারিত হওয়ার খবরটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।
নন্নী ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক খোলাবাজারে স্থানীয় দুজন চারা বিক্রেতার কাছ থেকে পাঁচ কেজি হাইব্রিড তেজ গোল্ড ধানের চারা কিনে জমিতে লাগান। এই কৃষকেরা সঠিক মাত্রায় খেতে সেচ ও সার দেন। কিন্তু ধানগাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেতের ফসলে তারতম্য দেখা দেয়। খেতের কিছু অংশে যখন ধান পাকতে শুরু করেছে, তখন অন্য অংশে কেবল থোড় আসছে। কিছু অংশে ফুলই আসেনি। জমির ফসলের এ রকম তারতম্য দেখে কৃষকেরা ফলন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
প্রতিএকর ধান চাষে তাঁদের ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধারদেনা করে তাঁরা ধান চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু শেষ সময়ে এসে খেতের ফসলের এ অবস্থায় সবাই ভেঙে পড়েছেন। ফসল ঘরে তুলতে না পারলে ঋণ পরিশোধ করবেন কীভাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। তবে শুধু নালিতাবাড়ীতেই নয়, এ ধরনের ঘটনা দেশের অন্যান্য অংশেও ঘটছে। সারা দেশে চলছে অসাধু কৃষিবীজ ব্যবসায়ীদের রমরমা বাণিজ্য। এতে ত্রুটিযুক্ত, ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ নিয়ে কৃষকদের প্রতারিত হওয়ার ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত তো হচ্ছেনই, পাশাপাশি দেশের খাদ্যনিরাপত্তাও বিঘ্নিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতের বীজ ব্যবহার কমে যাওয়ার কারণে এবং বীজ মনিটরিং কমিটির কার্যকর ভূমিকা না থাকায় এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) নির্ধারিত ডিলার ছাড়াও অনেকে হাটবাজারের বিভিন্ন স্থানে বীজের ব্যবসা করছে। নামীদামি বিদেশি কোম্পানির প্যাকেটে বিএডিসির নকল সিল লাগিয়ে নিম্নমানের বীজ বিক্রি করা হচ্ছে। এসব দেখার দায়িত্ব বিএডিসির। কিন্তু এসব নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনো পর্যবেক্ষণ করতে বা অভিযান চালাতে দেখা যায় না।
কোনো সন্দেহ নেই, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা আরও হুমকিতে পড়বে। খাদ্য ছাড়া মানুষ অচল। তাই খাদ্যের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে সচেতন হতে হবে। দেশের মোট চাহিদার ২২ শতাংশ বীজ সরবরাহ করে বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলো। এ ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দরকার। অসাধু বীজ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে দরকার কৃষককে রক্ষার জন্য যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন। কেননা, ভেজাল বীজ বা অন্য কোনো কারণে ফসল নষ্ট হলে কৃষক ক্ষতিপূরণ পান না। বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সরকার, তথা কৃষি মন্ত্রণালয়কে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।