মিষ্টি আমের গন্ধে মধু মাসের আগমন
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০৫-১৫ ১২:৪৬:০৬
আজ জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিন। আমের শহর রাজশাহীতে এদিনই শুরু হচ্ছে আম ‘ভাঙা’। দীর্ঘ একবছর প্রতীক্ষার পর আমের গন্ধে এদিন ভরে উঠবে রাজশাহীর বাজার, তা ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে। এদিকে, লিচু এখনও টসটসে না হয়ে উঠলেও বেশি দামের আশায় ও বাদুড়সহ অন্য পাখির হাত থেকে রক্ষা পেতে আগাম নেমে গেছে বাজারে। কাঁঠালও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। তবে আম নামলেই যেন মধু মাসের মধুর স্বাদটা ফুটে উঠবে শতভাগ। জ্যেষ্ঠ, অর্থাৎ মধু মাসের প্রথম দিনেই সেই সুযোগটি পাচ্ছেন রাজশাহীবাসী, তাদের সুবাদে দুয়েকদিনের মধ্যে বাকিরাও।
দেশবাসীকে ‘বিষমুক্ত’ ফল দিতে গত তিন বছর ধরেই গাছ থেকে আম পাড়ার জন্য সময় বেঁধে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। আম ‘ভাঙানো’ বা আম ‘নামানো’ হিসেবে পরিচিত এই সময়টি আগের তিন বছরেও আরও একটু পরে শুরু হয়েছিল। গত বছরই যেমন গুটি আম ২০ মে, গোপালভোগ ২৫ মে এবং লক্ষ্মা বা লক্ষ্মণভোগ ১ জুলাই থেকে পাড়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু এবার তাপদাহের কারণে আগে পাকতে শুরু করায় আজ ১৫ মে থেকেই গুটি জাতের আম পাড়ার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর গোপালভোগ ২০ মে; রাণীপছন্দ ও লক্ষ্মা বা লক্ষ্মণভোগ ২৫ মে; হিমসাগর ও ক্ষীরসাপাত ২৮ মে; ল্যাংড়া ৬ জুন; আম্রপালি, ফজলি ও সুরমা ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা আম পাড়া যাবে আগামী ১ জুলাই থেকে। এই হিসাবে গুটি আম, গোপালভোগ ও লক্ষ্মা বা লক্ষ্মণভোগ— এই তিন জাতের আম পাড়ার সময়ই গত বছরের চেয়ে পাঁচ দিন করে এগিয়ে আনা হয়েছে।
এদিকে, আম ওঠার এই সময় ঘিরে চলছে অন্য ধরনের প্রস্তুতিও। এই সময়টিতে অনেকেই আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার আম বাগান আর বাজার ভ্রমণ করে থাকেন। অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই এলাকায় ছুটে আসেন সরাসরি বাগান ও বাজার থেকে আম কিনতে। এ ধরনের ‘ম্যাংগো ট্যুরে’র প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোজার মধ্যে খুব একটা না হলেও ঈদের পরপরই এ ধরনের কর্মব্যস্ততায় মুখর হয়ে উঠবে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আনাচে-কানাচে।
জেলার পবার নওহাটা এলাকার আমচাষি আরমান আলী বলেন, গাছে পাকিয়ে আম নামালে আর কেমিকেল দিয়ে আম পাকাতে হয় না। এজন্য তার মতো সব চাষিই এখন গাছ পাকা আম নামান। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। এরই মধ্যে প্রায় গাছের আমেই পূর্ণতা এসে গেছে। বুধবার (১৫ মে) থেকে আম নামানো শুরু হচ্ছে। প্রতিবছর এক হাজার থেকে দেড়হাজার টাকা মন আম বিক্রি শুরু হয়। এবারও তেমন দাম পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
এদিকে, লিচুর সাম্রাজ্য হিসেবে আবার পরিচিত দিনাজপুর ও পাবনা। এই দুই জেলার বাজারে এরই মধ্যে এসে গেছে আগাম জাতের লিচু। প্রতি একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। তবে রোজার শেষের দিকে মূলত লিচুর পূর্ণ মৌসুম শুরু
হবে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বোম্বাই, বেদানা, চায়না-৩-এর মতো শাঁসালো-রসালো লিচু মূলত বাজারে আসবে তখনই। ওই সময় দামও ক্রেতাদের হাতের নাগালে চলে আসবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারাই।
লিচু চাষিরা বলছেন, প্রায় পাক ধরে আসা লিচু বাদুড়সহ পাখিদের হাত থেকে রক্ষা করতেই এখন ঘাম ঝরাতে হচ্ছে তাদের। গাছগুলো মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জালে। গাছে বাঁধা হয়েছে বড় বড় টিনের খোল, যেন এর একটু আওয়াজেই পাখিরা পালিয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন সুমিষ্ট এ ফলটি বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া, যশোর ও ঢাকার সোনারগাঁও এলাকায় লিচুর বাগান দেখা যেত। এখন দেশের প্রায় সবখানেই লিচুর বাগান গড়ে উঠছে। তারপরও দিনাজপুর আর পাবনার ঈশ্বরদীর পাশাপাশি রাজশাহীর বাঘা এলাকার লিচুর অপেক্ষাই করে থাকেন সারাদেশের মানুষ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র বলছে, দিনাজপুরের ১৩ উপজেলা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের লিচুর বাগান। ১৫৫৩ হেক্টর জমিতে বাগান রয়েছে ২৬২৮টি। আর বসত বাড়ির ৪০১ হেক্টর জমিতেও লিচু বাগান রয়েছে। এখানে মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা, কাঠালি, চায়না-৩ লিচুর বাগান বেশি। অন্য দিকে পাবনা জেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এর বেশিরভাগই ঈশ্বরদীতে। পাবনায় মূলত দেশি ও বোম্বাই জাতের লিচুর বাগান বেশি রয়েছে।