রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে মে মাসে
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৯-০৬-০৩ ২২:২২:৫৯
ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা মে মাসে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে যেকোনো মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১৫৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। মে মাসের আগ পর্যন্ত সেটিই ছিল একমাসে সর্বোচ্চ পাঠানো রেমিট্যান্স।
এদিকে, সদ্য বিদায়ী মে মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৬ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলার বেশি। ২০১৮ সালের মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৮ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে গত এপ্রিল মাসের তুলনায় গত মে মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। গত এপ্রিল মাসে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৪৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সোমবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় বলেন, গত মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এটি আগের মাসের তুলনায় কিছুটা বেশি। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ঈদ হওয়ার কারণে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। বিশেষ করে হুন্ডি প্রতিরোধে কড়াকড়ি ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে নেওয়া নানা উদ্যেগের সুফল পাওয়া যাচ্ছে।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের মে) পর্যন্ত সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৫০৪ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। এটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪৭ কোটি ১৯ লাখ ডলার বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালে মে) রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৩৫৭ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্সের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য এ চিত্র উঠে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের (২০১৯) প্রথম থেকেই বাড়ছে রেমিট্যান্সের প্রবাহ। গত জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ১৫৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ছিল রেমিট্যান্সের রেকর্ড। জানুয়ারি পর গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স আসে ১৩১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, মার্চে ১৪৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, এপ্রিলে রেমিট্যান্স আসে ১৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং সর্বশেষ মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার, মার্চে ১৩১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার এবং এপ্রিলে ১৪৩ কোটি ৪০ লাখ এবং মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৪৮ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। সব মিলিয়ে ২০১৮ সালের প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স আসে ৬৬৫ কোটি ৫৬ লাখ মার্কিন ডলার। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স আসে ৭৫৪ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার। বছরের প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৮৮ কোটি ৯১ লাখ মার্কিন ডলার।
সূত্র জানায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠান ১৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার, আগস্টে ১৪১ কোটি ১০ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ১১২ কোটি ৭৩ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, নভেম্বর ১১৮ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ১২৩ কোটি ডলার, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ১৫৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ১৩১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, মার্চে ১৪৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, এপ্রিলে ১৪৩ কোটি ৪০ লাখ ও মে মাসে ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্জিকা বছর হিসাবে, ২০১৮ সালে দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৭ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিন ডলার ও ২০১৫ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে অর্থবছর হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল। ওই বছরে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার কোটি ৩৩০ কোটি ২০ লাখ ডলার।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ যথাক্রমে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, যুক্তরাজ্য, কাতার, ইতালি ও বাহরাইন।