বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের মুক্ত করতে জোরেশোরে পদক্ষেপ নিচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন ও আগমন ঠেকাতে পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কিত মিডিয়া স্টেটমেন্ট প্রকাশ করেছে।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, সরকারি সংবাদ সংস্থা বার্নামা ও দ্য সান পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকেও সচেতন হওয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছে সরকার।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে দেশে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একটি সার্বিক পরিকল্পনা তৈরি করেছে যা চলমান কার্যক্রমকে উন্নত ও শক্তিশালী করবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানশ্রি মুহিউদ্দিন ইয়াসিন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাঁচ বছর মেয়াদি এই পরিকল্পনায় দেশের অবৈধ অভিবাসী খুঁজে বের করার লক্ষ্যে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের সঙ্গে পুলিশ, মেরিন, স্টেট সরকার, গ্রাম কমিউনিটি কাউন্সিলি এবং গ্রাম প্রতিরক্ষা ও উন্নয়ন কমিটিকে কাজে লাগানো হবে। সরকার ধারণা করছে বিভিন্ন স্থানে স্থানীয়দের আশ্রয়ে অবৈধ অভিবাসী রয়েছে।
স্থানীয়রা যাতে অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় ও চাকরি দিতে না পারে সেজন্য অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় ও চাকরিদাতাদের ১ বছরের জেল এবং ১০ -১২ হাজার রিংগিত জরিমানার বিধান রেখে আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার।
ইতোমধ্যে ৬০৫ জন চাকরিদাতাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাদেরকে মানবপাচারের অপরাধে শাস্তি দেয়া হতে পারে।
অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনায় ৫টি কৌশল হাতে নিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। এগুলো হলো-
১. দেশব্যাপী অবৈধদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন;
১. নতুন আইনের খসড়া প্রণয়ন এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগের নীতিগুলোর সমন্বয়-সম্পর্কিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন;
৩. প্রবেশ পথ এবং বর্ডার নিয়ন্ত্রণ কৌশল যা দেশের সীমানা এবং প্রবেশপথ গুলোর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম সম্পর্কিত বাস্তবায়ন পরিকল্পনাকে নির্দেশ করে।
৪. বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্কিত নীতিমালার সমন্বয় যা পরিকল্পনার আওতায় বিদেশি ব্যবস্থাপনা কৌশল নির্দেশ করে।
৫. মিডিয়া এবং প্রচার কৌশল যা অবৈধদের বিষয়ে মিডিয়া কভারেজ, প্রচার ও সচেতনতা প্রোগ্রাম সম্পর্কিত পরিকল্পনাকে নির্দেশ করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মালয়েশিয়াতে অবৈধ অভিবাসী নিরাপত্তা, স্থানীয় রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি জাতীয় সমস্যা যা এখনো সম্পূর্ণভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি। এটা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ ৭ হাজার ৯৪০টি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ১ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে যাচাই-বাছাই করে ২৩ হাজার ২৯৫ জনকে আটক করে; যার মধ্যে সর্বোচ্চ ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ৮ হাজার ১১ জন (৩৪%), বাংলাদেশি নাগরিক ৫ হাজার ২৭ জন (২৩%)। এসব দেশের পাশাপাশি মিয়ানমার, ফিলিপিন, থাইল্যান্ড, ভারত এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একই সময়ের মধ্যে ২৬ হাজার ১১৬ জনকে দেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ।
মালয়েশিয়ার নতুন কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা দেশটিতে নানা কারণে অবৈধ হয়ে যাওয়া বিদেশি অভিবাসীদের শঙ্কিত করে তুলেছে। সাধারণত বিভিন্ন এজেন্ট, দালাল ও মিডিলম্যানদের প্রতারণা এবং কোম্পানির গাফিলতির কারণে অনেকে বৈধতা হারিয়ে ফেলেছেন।
বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, রিহায়ারিংয়ের সময়ে অনেকেই সরল বিশ্বাসে এজেন্ট বা কোম্পানির মাধ্যমে তিনটি ভেন্ডরের কাছে নাম লিখিয়েছিলেন কিন্তু প্রতারিত হয়েছেন। তাদের বৈধতা বা ভিসা দিতে মালয়েশিয়া সরকারের নিকট প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ মালয়েশিয়া সফরকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও মানবসম্পদ মন্ত্রির সঙ্গে আলাপকালে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করে নেয়া, স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে আগ্রহীদের জরিমানা ছাড়া দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং এসব নাগরিকদের ব্লাক লিস্ট না করার জন্য অনুরোধ করেন।
তবে মালয়েশিয়া সরকার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কর্মীদের শ্রম ও কর্মের মূল্যায়ন করবে বলে আশা করেছেন প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী।