গত মৌসুমে ভারতে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাম্পার ফলন সত্তেও মৌসুমজুড়ে তীব্র সংকটের ভেতর দিয়ে গেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। মূলত মৌসুমের শুরুতে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও আগাম বন্যার কারণে দেশটির বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সরবরাহ সংকট থেকে বাড়তে শুরু করে পণ্যটির দাম। মৌসুমের শেষ দিকে খরা এসে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ আরো বাড়িয়ে দেয়। সরবরাহ না থাকায় ভারতীয় পেঁয়াজ রফতানিতেও ভাটা পড়ে। অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি দাম বেড়ে যায় আমদানিকারক দেশগুলোর বাজারেও। চলতি মৌসুমে দেশটিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রাক্কলন আগের মৌসুমের তুলনায় বাড়তি ধরা হয়েছে। তবে এবারো চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে প্রকৃতি। মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোয় অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং খরা পরিস্থিতি পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্য পূরণ নিয়েই সংশয় তৈরি করেছে। তাই বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈরী প্রকৃতির কারণে এবারের মৌসুমেও নতুন করে সংকটে পড়তে পারে ভারতীয় পেঁয়াজের বাজার।
ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যাশনাল হর্টিকালচার বোর্ডের (এনএইচবি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০-১১ মৌসুমে ভারতে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৫১ লাখ ১৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০১৫-১৬ মৌসুমে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন প্রথমবারের মতো দুই কোটি টনের মাইলফলক পেরিয়ে যায়। ওই মৌসুমে ভারতে মোট ২ কোটি ৯ লাখ ৩১ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৭-১৮ মৌসুমে ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ ৬২ হাজার টনে, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মৌসুমের শুরুতে আগাম বন্যা ও পরবর্তী সময়ে খরা পরিস্থতিও ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদনে বাধা হতে পারেনি।
২০১৮-১৯ মৌসুম শেষে ভারতে সব মিলিয়ে ২ কোটি ৩৬ লাখ ১০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে এনএইচবি। তবে মৌসুম শেষে এ লক্ষ্য পূরণ হবে কিনা, তা নিয়ে জোর সংশয় রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, গত মৌসুমের শুরুতে ও শেষে প্রকৃতি বৈরী হয়ে উঠেছিল। মৌসুমের মাঝামাঝি সময় আবহাওয়া ছিল পেঁয়াজ আবাদের অনুকূলে। এ কারণে ভারতে পণ্যটির উৎপাদনে বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে ছিল। পাইকারি পর্যায় ও রফতানি বাজারে দাম বাড়তির দিকে থাকলেও ভারতীয় চাষীরা পেঁয়াজের খুব একটা দাম পাননি।
এবার পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। বিশ্লেষকদের মতে, এখন ভারতে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে মহারাষ্ট্রসহ কয়েকটি রাজ্যে তাপমাত্রা বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বাড়তি রয়েছে। এ পরিস্থিতি এসব রাজ্যে পণ্যটির উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। ফলে মৌসুম শেষে দেশটিতে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্য অর্জন না-ও হতে পারে। বিশেষত মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলোয় বিদ্যমান প্রতিকূল আবহাওয়া সংশয় আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তীব্র গরমে ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেক পেঁয়াজ।
মহারাষ্ট্রের লাসালগাঁওয়ের মান্দিতে এশিয়ার অন্যতম পেঁয়াজ বেচাকেনার কেন্দ্র অবস্থিত। ভরা মৌসুমে মান্দির পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১২ রুপিতে উঠেছে। আগামী আগস্ট নাগাদ পণ্যটির দাম ১৫-২০ শতাংশ বাড়তে পারে। মূলত প্রতিকূল আবহাওয়া এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় ভারতে পেঁয়াজের বাজারে চাঙ্গাভাব দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ওনিয়ন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট অজিত শাহ বলে, ভারতে উৎপাদিত পেঁয়াজের ৬০ শতাংশের বেশি জোগান দেয় মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো। এ কারণে এসব অঞ্চলে আবহাওয়া বৈরী হয়ে উঠলে পেঁয়াজের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। আগের মৌসুমে উৎপাদন বাড়তি থাকলেও সরবরাহ ব্যাহত হয়ে পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল। এবার প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পণ্যটির উৎপাদন নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। এ কারণে আগামী দিনগুলোয় পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।