অবশেষে চাল রফতানির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি মৌসুমে উৎপাদিত বোরো ধানের দাম অস্বাভাবিকহারে কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টদের দাবি, চাল রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হলে এর প্রভাবে দেশীয় বাজারে ধানের দাম কিছুটা বাড়বে। এতে কৃষক লাভবান হবে। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চাল ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল চাল রফতানির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘প্রস্তাবটির সব দিক যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি কুনমিং গেছেন সোমবার (১০ জুন)। আর গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম। ব্যবসায়ীদের মধ্যে লায়েক আলী, আব্দুর রশিদ উপস্থিত থাকবেন। মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে কৃষিমন্ত্রীর দফতরে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও এটি ২/৩দিন পর হবে জানা গেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় বৈঠকটি পিছিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী।
দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষকরা ধানের ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া মহাসড়কসহ রাস্তায় ধান ছিটিয়ে প্রতিবাদ করেছেন কৃষকরা। গত ২৭ মে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। খাদ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর কাছে তিনি বিষয়টি জানতে চান। একইসঙ্গে কৃষকের পাকা ধানের ক্ষেতে আগুন লাগানোর ঘটনাটি কোনও মহলের সাজানো নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, ওই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী সবদিক বিবেচনায় রেখে চাল রফতানির বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। যাতে ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা সৃষ্টি না হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত বিশ্বের কোনও দেশ থেকে চাল আমদানির ডিমান্ড অর্ডার (ডিও বা চাহিদাপত্র) পাওয়া যায়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় বাংলাদেশের সেদ্ধ চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেখান থেকে ডিও অবশ্যই পাওয়া যাবে। সেসব এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
তাই কীভাবে ও কোথায় চাল রফতানি করা হবে তার কৌশল ঠিক করতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক হবে। এতে বাণিজ্য, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবরাসহ চাল ব্যবসায়ীরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী ও সচিব দু’জনই বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টন চাল রফতানি করবে। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার ১০ লাখ টন চাল রফতানি করতে চায়।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবার সঙ্গে কথা বলেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। সরকার কৃষকের সুবিধা অসুবিদার বিষয়ে খুবই সচেতন।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘কৃষকের ধানের দাম কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয় নিয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। এ বিষয়টি স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। আমরা এর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকদের ধানের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকার অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করে বিষয়টি ফয়সলা করা হবে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
চাল রফতানির বিষয়ে জানতে চাইলে লায়েক আলী বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার (১১ জুন) আমাকে ও আমাদের সভাপতি আব্দুর রশিদকেও ডাকা হয়েছিল। পরে আমাকে ফোন করে বৈঠকটি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বৈঠকটি ২/৪দিন পরে সুবিধাজনক সময় হবে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বাম্পার ফলনের কারণে দেশে ধান উৎপাদনের পরিমাণ ৩ কোটি ৬২ লাখ টনে পৌঁছেছে। এবছর দেশে মোট ধান উৎপাদন হবে ৩ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৫৫ লাখ টন। এর মধ্যে বোরো উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ মেট্রিকটন। বাংলাদেশে চালের মোট চাহিদা রয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিকটন। বাড়তি ৭০-৭৫ লাখ মেট্রিকটন চালের মধ্যে মিলারদের কাছে একটি বড় অংশ মজুত থাকে। এর মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করবে ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন এবং চাল সংগ্রহ করবে ১০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন। বর্তমানে এই সংগ্রহ অভিযান চলছে।