তিন মাসে ব্যাংকে ঋণ খেলাপি বেড়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা । যেখানে এক টাকাও বাড়ার কথা না সেখানে ১৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি যা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয় এমন মন্তব্য করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)‘র সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আজ মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ’ অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। এতে মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির সিনিয়র গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ব্যাংক খাত নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভালো। তিন-চার বছর ধরে এ বিষয়ে বলতে বলতে এমন একটা অবস্থায় এসেছি অবশেষে ব্যাংক খাতের সংকট সবাই উপলব্ধি করছে। কিন্তু প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে আমরা তার প্রতিফলন দেখি না। বর্তমান সরকার আসার পর যে কয়টা পদক্ষেপ নিয়েছে, সবগুলো ব্যাংক খাতের জন্য আরও ক্ষতিকর হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে যদি সুশাসন ফিরিয়ে আনা না যায় এবং যারা অপরাধ করেছে তাদের শাস্তি না দিলে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হবে। ব্যাংকে কেউ টাকা রাখছে না, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে তারাও টাকা দিচ্ছে না।ফলে সৃষিট হয়েছে তারল্য সংকট ।
তিনি বলেন, ঋণ খেলাপিদের সুযোগ দিয়ে সরকার অন্যায় করেছে । যতই তাড়াতাড়ি তাদের আইনের আওতায় আনা যায় ততই ভালো হবে ।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে গত দশ বছরে যে কোন সময়ের চেয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি চাপের মুখে রয়েছে । বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা অর্থনীতির একটি শক্তি ছিল। সেই শক্তিতে চিড় ধরেছে, দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। এর অনুসঙ্গ কর আহরণে অপারগতা এখন বাংলাদেশের উন্নয়নের একটা অমোচনীয় প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সরকার ডলার বিক্রি করে টাকাকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। টাকাকে স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখার যৌক্তিকতা নেই। প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে চালু রাখতে হলে টাকাকে এখন নিচে নামিয়ে নিয়ে আনতে হবে। এটা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, সরকার যেটা মনে করছে টাকা সস্তা করলে আমদানি ব্যয় বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর একটা প্রভাব পড়বে। আমরা মনে করি মূল্যস্ফীতি এখন যে অবস্থানে আছে, তাতে এ হার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে। সে কারণে টাকাকে কিছুটা অবমূল্যায়ন করলে তা সহ্য করার শক্তি অর্থনীতির আছে। কিন্তু অন্য সময় মূল্যস্ফীতি যদি বেড়ে যায়, তাহলে এটা করা জটিল হয়ে পড়বে।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া উচিত হবে না এমন মন্তব্য তুলে ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হলে সেটা আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের পরিপন্থি হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে- ঘুষ, অনুপার্জিত আয়, কালো টাকা, পেশি শক্তি মাধ্যমে উপার্জন করা, সেগুলোকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা ।
ব্রিফিংয়ে সিপিডির পক্ষ থেকে ১০ টি সুপারিশমালা তুলে ধরা হয় সেগুলো হলো
১. রাজস্ব আহরণের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে।
২. সরকারি ব্যয় সুশৃঙ্খলভাবে করতে হবে যাতে অবচয় না হয়।
৩. কর ছাড়ের ব্যাপারটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
৪. সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় করা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।
৫. প্রত্যেক কৃষককে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।
৬. ব্যাংক কমিশন গঠন ও সুদের হার বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর ছেড়ে দিতে হবে।
৭. পুঁজিবাজারের সংস্কারের ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিতে হবে।
৮. সরকারি প্রতিষ্ঠান অডিট করে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।
৯. সামাজিক খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে
১০. টাকার অবমূল্যায়ন করতে হবে।
সানবিডি/এমএফইউ