প্রাকৃতিক গ্যাস খাত বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির ভেতর দিয়ে গত বছরটি পার করেছে । শুধু গত বছরই নয়, বরং আগামী দিনগুলোতেও বিশ্বব্যাপী জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত ব্যবহারে চাঙ্গাভাব বজায় থাকতে পারে। এ ধারাবাহিকতায় পরবর্তী পাঁচ বছরে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক ব্যবহার বর্তমানের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক ব্যবহার বৃদ্ধির পেছনে এশিয়ার দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোয় চাহিদা বেড়ে যাওয়া ও বৈশ্বিক গ্যাস বাণিজ্যের বিকাশে নানামুখী উদ্যোগ অব্যাহত রাখাকে কারণ হিসেবে দেখছে সংস্থাটি। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
আইইএর গ্যাস-২০১৯ শীর্ষক বার্ষিক বাজার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার প্রবৃদ্ধিতে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ উল্লম্ফন দেখা গেছে। ২০১০ সালের পর এটাই জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহারে সবচেয়ে বড় প্রবৃদ্ধির রেকর্ড। আগামী দিনগুলোতেও জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহারে প্রবৃদ্ধি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, পরবর্তী পাঁচ বছরে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক ব্যবহার বর্তমানের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। ২০২৪ সাল নাগাদ জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত বৈশ্বিক ব্যবহার বছরে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি ঘনমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাতিহ বিরল বলেন, দেশে দেশে পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা দ্রুত বাড়ছে। ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলো জলবায়ু সুরক্ষার স্বার্থে প্যারিস চুক্তির শর্ত মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে। এর অংশ হিসেবে চীনসহ অনেক দেশই জ্বালানি ও শিল্প খাতে কার্বন নিঃসরণের হার সীমিত করতে জ্বালানি তেল ও কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। পরিচ্ছন্ন ও তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি দ্রুতবর্ধনশীল দেশগুলো গ্যাসনির্ভর অর্থনীতিতে ঝুঁকতে শুরু করেছে। প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবেশদূষণ প্রতিরোধে সহায়ক। জ্বালানি ও শিল্প খাতে তুলনামূলক কম কার্বন নিঃসরণ করে প্রাকৃতিক গ্যাস। তাই যত দিন যাচ্ছে ততই জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহার বাড়ছে।
তিনি আরো বলেন, একটি দূষণমুক্ত বৈশ্বিক শক্তি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়ানোর বিকল্প নেই। তবে জ্বালানি পণ্যটি আগে থেকেই বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। এর মধ্যে অন্যতম মূল্য ব্যবস্থাপনা। বৈশ্বিক প্রাকৃতিক গ্যাস খাতে তীব্র প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সময়ই পণ্যটির সঠিক মূল্য নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে মাত্রাতিরিক্ত মিথেন নির্গমনের হার সীমিত রাখার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মধ্য দিয়ে আগামী দিনগুলোয় বৈশ্বিক জ্বালানি খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের আধিপত্য দেখা যাবে।
গত বছর চীনে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা মিলেছে। ২০২৪ সাল নাগাদ জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধির ৪০ শতাংশের পেছনে চীনের একক ভূমিকা থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আইইএ। একই সঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলো জ্বালানি পণ্যটির ব্যবহার বৃদ্ধির পেছনে অবদান রাখবে। ২০২৪ সাল নাগাদ প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক ভোগের ৬০ শতাংশ এ অঞ্চলের দেশগুলো ব্যবহার করবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোও ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় ভোক্তা হয়ে উঠছে।
দাম তুলনামূলক সস্তা ও পরিবহন ব্যয় কম লাগার কারণে এশিয়া-আফ্রিকার দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলো বিকল্প জ্বালানি হিসেবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গত বছর এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা ছিল ৪৩ হাজার ২০০ কোটি ঘনমিটার। ২০২৪ সাল নাগাদ জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে ৫৪ হাজার ৬০০ কোটি ঘনমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইইএ। এ সময় ১০ হাজার ৯০০ কোটি ঘনমিটার এলএনজি আমদানি করে জ্বালানি পণ্যটির শীর্ষ আমদানিকারক ও ভোক্তা হিসেবে স্বীকৃত হবে চীন।