বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষদের জন্যও পেনশন চালুর প্রতিশ্রুতি আবারো দিল সরকার। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনের সময় বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ পরিকল্পনার কথা জানান।
চলতি অর্থবছরের বাজেটেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু সেটি এখনো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, এটি প্রণয়ন করতে আরও তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, সরকারি পেনশনাররা দেশের সমগ্র জনগণের একটি ভগ্নাংশ মাত্র। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতসহ দেশের সমগ্র জনগণের জন্য একটি সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা পর্যায়ত্রমে চালু করার লক্ষ্যে একটি ‘ইউনিভার্সাল পেনশন অথরিটি শিগগিরই গঠন করা হবে। এ ছাড়া পেনশন পেতে যেন কোনো ধরনের হয়রানি না হয়, সেজন্য ডিজিটাল পদ্ধতি ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) ব্যবস্থার মাধ্যমে পেনশন দেয়ার কার্যক্রমও শুরু করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মাসে মাসে ব্যাংক বা হিসাবরক্ষণ অফিসে হাজিরা ছাড়াই পেনশনাররা যেন তাদের ব্যাংক বা মোবাইল হিসাবে পেনশন পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।’
এরই মধ্যে ২৭ হাজার পেনশনারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইএফটির মাধ্যমে অর্থ পাঠানো হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের মধ্যেই সব পেনশনারকে এই কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন হয়। এটি দেশের ৪৮তম এবং বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। বরাবরের মতো বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট। যদিও গত সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে অনেক বাজেট প্রণয়নে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি।
শুরুতে দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। কিন্তু বিকেল ৪টার পর অসুস্থ অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন সম্ভবপর না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাকি অংশ সংসদে উপস্থাপন করেন।
বেলা ৪টা ৪১ মিনিটে ‘প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে উপস্থাপিত হলো’ মর্মে ঘোষণা দেন স্পিকার।
প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।
এর আগে মন্ত্রিসভা ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেয়। বাজেট ঘোষণার আগে দুপুর ১টার একটু পর জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা এ অনুমোদন দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছর মূল বাজেটের আকার দাঁড়ায় চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, রাজস্ব আদায় করতে না পারা এবং উন্নয়ন প্রকল্পে পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ খরচ করতে না পারায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয় চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেট থেকে ৮০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বেশি।