ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছে । এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পানির খোঁজে ভিটেবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় বিরাণ হয়ে গেছে শত শত গ্রাম।
রান্নাবান্না, কাপড় কাচা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এমনকি পয়ঃনিষ্কাশনের জন্যও পানি নেই এসব অঞ্চলে। নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, গরমে এ পর্যন্ত ৩৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষত দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছে। প্রায় বছরজুড়েই চলছে এ তাপ তাণ্ডব।
চলতি মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সোমবার। রাজধানী নয়াদিল্লিতে এদিন ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিকে একই দিনে রাজস্থানে ৫০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এত উচ্চ তাপমাত্রা বিশ্বের খুব কম স্থানেই রেকর্ড হয়ে থাকে।
দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই থেকে প্রায় ২৫০ মাইল দক্ষিণে ব্যাপক পানিশূন্যতায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ধারণা করা হচ্ছে, এসব এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ বাসিন্দা নিজেদের বসতি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এদিকে বিভিন্ন সূত্র বলছে, মহারাষ্ট্রের ২০ মাইল দূরবর্তী বিদ অঞ্চলের হাতকারওয়াদি নামক গ্রামটি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।
গড়পড়তা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের কূপ ও চাপকলগুলো শুকিয়ে যায়। সম্প্রতি তীব্র আকার ধারণ করা চলমান খরা গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে। ১৯৭২ সালে ভারত ইতিহাসের ভয়ংকরতম খরার মুখোমুখি হয়েছিল। সে বছর খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন আড়াই কোটি মানুষ।
চলতি বছরের মে মাসের শেষ নাগাদ হাতকারওয়াদি গ্রামের ১০-১৫টি পরিবার ছাড়া প্রায় দুই হাজার বাসিন্দা অন্যত্র চলে গেছেন। কর্নাটকের পার্শ্ববর্তী ৮০ শতাংশ ও মহারাষ্ট্রের ৭২ শতাংশ জেলায় খরার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ দুটি রাজ্যের ৮০ লাখ কৃষককে বেঁচে থাকতেই মরণপণ সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
মহারাষ্ট্রের গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছয় হাজারের অধিক ট্যাংকার প্রতিদিন জল সরবরাহে নিয়োজিত রয়েছে। এ দুটি রাজ্যে পানিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ক্রমেই বাড়ছে। তীব্র পানি সংকটের কারণে খরাপ্রবণ অঞ্চলগুলোয় ভারতের কৃষিভিত্তিক জীবিকা প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। পানি স্বল্পতায় ফসল শুকিয়ে যাচ্ছে ও মারা যাচ্ছে। পানির অভাবে মারা যাচ্ছে অজস্র গবাদি পশু। অভূতপূর্ব চলমান খরায় আক্রান্ত অঞ্চলগুলোয় ভুট্টা, সয়া, তুলা, মিষ্টি চুন, ডাল ও বাদামের মতো প্রধান অর্থকরী ফসলগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।