পবিত্র ঈদ উল ফিতরের পর জমে উঠতে শুরু করেছে আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহীর আমের বাজার। রমজান মাসে রাজশাহীর বাজারে আম উঠলেও তেমন বেচাকেনা ছিল না। তবে ঈদের পরে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের আগমনে রাজশাহীর আম বাজার চাঙা হয়ে উঠছে। এখন প্রতিদিন রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫০-৬০ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।
গত সপ্তাহ থেকে পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটে উঠেছে নতুন ল্যাংড়া জাতের আম। বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ২২০০ টাকায়, হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ২৩০০ টাকায়, ক্ষিরসাপাত ২৪০০ থেকে ৩০০০ টাকায়, লখনা ও গুঠি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়।
আম ব্যবসায়ী রাসেল আহমেদ জানান, ‘রমজানের পর সব ধরনের আম মণপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। এখন আর আমের দাম কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। এই সপ্তাহের পর দাম আরও বাড়বে।’
পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটের পাইকারী ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন জানান, ‘পুরো রোজায় হাটের এই মাঠে আমের গাড়ি থাকতো। কিন্তু ঈদের পরে মাঠ ছেড়ে মহাসড়কের অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত গাড়ি উঠেছে। এখন বাইরের অনেক ব্যবসায়ী এসে আম নিয়ে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক আম যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।’
ক্রেতা জুয়েল আহমেদ জানান, ‘রোজার সময় যে সব আম নিয়েছিলাম এখন সেই আমের দাম অনেক বেশি। ঈদের পরেই আমের দাম বেড়েছে। তবে হাটে প্রচুর পরিমাণে আম এসেছে।’
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে গুটি আম, গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে, ক্ষিরসাপাত ২৮ মে, লখনা ২৬ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি এবং ফজলি ১৬ জুন, আশ্বিনা ১৭ জুলাই থেকে আম চাষিরা গাছ থেকে পাড়া শুরু করেছেন।
বাঘা উপজেলায় কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ উপজেলায় আম বাগান রয়েছে ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর। উপজেলার মানুষ প্রতি বছর আম মৌসুমে আয় করেন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা। বাঘায় গুটি আম পাইকারি হিসেবে প্রতিমণ সাড়ে ৮০০ থেকে সাড়ে ১২০০ টাকা, ক্ষিরসাপাত ২২০০ টাকা থেকে ২৪০০ টাকা, গোপালভোগ ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা, ল্যাংড়া ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা, লখনা সাড়ে ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রাজশাহীর আম ঢাকা, নরসিংদী, ভৈরব, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ফেনীসহ দেশের অন্যান্য স্থান থেকে কেনাবেচা হয়। কিন্তু এখন এ আম আর দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিদেশে রফতানি শুরু হয়েছে। ফলে চাষিদের মধ্যে আম রফতানির বিষয়ে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।
বাঘা উপজেলার কলিগ্রামের আমচাষি আশরাফুদৌল্লা ও আড়পাড়া গ্রামের মহসীন আলী জানান, ইতোমধ্যে আম রফতানি শুরু হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি পেয়ে চাষিরা খুশি। গতবারের চেয়ে এবার আমের চাহিদাও বেশি।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লা সুলতান বলেন, ‘বাঘা উপজেলার মাটি আম চাষের জন্য উপযোগী। চলতি মৌসুমে ৩৩ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি করার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা রয়েছে।’
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, বিদেশে আম রফতানি করতে হলে ২৬টি শর্ত মানতে হয়। ব্যাগিং হচ্ছে ২৬টি শর্তের একটি। তবে ব্যাগিং করা না হলেও আমের মান ভালো হলে বাইরে রফতানি করা যায়। তবে বিদেশ যেতে হলে সব আম কোয়ারেন্টাইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করতে হয়। এ জন্য রফতানিকারকরা আম ঢাকার শ্যামপুর প্ল্যান কোয়ারেন্টাইন উইং সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে নিয়ে যান। আমের মান ভালো হলে সেখানে ছাড়পত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপরই জাহাজের কনটেইনারে করে আম বিদেশে যায়। গত বছর কোয়ারেন্টাইন পরীক্ষার কড়াকড়িতে আম রফতানি কম হয়েছে।
সব শর্ত মেনে গত বছর (২০১৮ সালে) ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ২৫ মেট্রিক টন আম রফতানি করেছেন রাজশাহীর ১৪ জন ব্যবসায়ী। এর আগে ২০১৭ সালে রফতানি করেছিলেন ৩০ মেট্রিক টন। গত বছর রফতানিযোগ্য আম ছিল প্রায় ১০০ মেট্রিক টন। বিপুল পরিমাণ আম রফতানি করতে না পেরে কম দামে দেশের বাজারেই সেসব আম বিক্রি করতে হয়। অথচ এসব আম উৎপাদনে চাষিদের বাড়তি খরচ করতে হয়েছিল। তাই এ বছর আম রফতানি করে লাভের মুখ দেখতে চান স্থানীয় চাষিরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক শামসুল হক বলেন, ‘আম রফতানিতে আমাদের সক্ষমতা রয়েছে কমপক্ষে ১০০ মেট্রিক টন। তবে আম মানসম্মত হলে যত বেশিই উৎপাদন হোক না কেন, সবই রফতানি করতে পারবো। মান ভালো হলে ফ্রুট ব্যাগিং ছাড়াও আম রফতানি করা যায়। আশা করছি, এবার অন্তত ৫০ মেট্রিক টন আম আমরা বাইরের দেশে পাঠাতে পারবো।’