পুঁজিবাজারের প্রস্তাব সৃষ্টি করবে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ
পুঁজিবাজার ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-০৬-১৬ ১৭:৪৫:২৪
২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যেসব প্রস্তাবাদি রাখা হয়েছে এতে বাজারে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং জাতীয় অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিএসইর প্রধান কার্যালয়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান।
কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম. খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বে, সঠিক দিক নির্দেশনা এবং কর্মপ্রচেষ্টায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এসব প্রস্তাবনার মাধ্যমে বেসরকারি খাত আরো শক্তিশালী এবং বিকশিত হয়ে দেশে বিনিয়োগবান্ধবক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যা দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আরো আকৃষ্ট করবে।
সংবাদ সম্মেলনে কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা নগদ লভ্যাংশ প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর মধ্যে নগদের পরিবর্তে বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এতে বিনিয়োগকারীগণ তাদের প্রত্যাশিত প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানিসমূহের বোনাস লভ্যাংশের পরিবর্তে নগদ লভ্যাংশ প্রদানকে উৎসাহিত কার জন্য কোনো কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বোনাস লভ্যাংশের উপর ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের বিধান প্রস্তাব করেন।
কোম্পানির অর্জিত মুনাফা থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার পরিবর্তে রিটেইনড আর্নিংস বা বিভিন্ন ধরনের রিজার্ভ হিসেবে রেখে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এতে প্রত্যাশিত লভ্যাংশ প্রাপ্তি থেকে বিনিয়োগকারীগণ বঞ্চিত হন এবং পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ধরনের প্রবণতা রোধে কোনো কোম্পানির কোনো আয় বছরে রিটেইনড আর্নিংস, রিজার্ভ ইত্যাদির সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে যতটুকু বেশি হবে তার উপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের বিধান প্রস্তাব করেন।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে প্রণোদনা প্রদান এবং পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের জন্য পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি হতে প্রাপ্ত লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার থেকে বৃদ্দি করে ৫০ হাজার টাকায় নির্ধরণের প্রস্তা। এর ফলে বিনিয়োগকারীগণ পুঁজিবাজারে অধিক বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে এবং বছরের তারল্য সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। একই সাথে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীগণ দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে।
নিবাসী কোম্পানির লভ্যাংশ আয়ের ওপর একাধিকবার করারোপ রোধ করার বিধান গত বছর কার্যকর করা হয়েছিল। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য এ অর্থবছরে নিবাসী ও অনিবাসী সকল কোম্পানির ক্ষেত্রে লভ্যাংশ আয়ের উপর একাধিকবার করারোপ রোধ করার বিধান কার্যকর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে নিবাসী কোম্পানির পাশাপাশি অনিবাসী কোম্পানির লভ্যাংশ আয়ের উপর একাধিকবার করারোপন হবে না।
এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক, পুঁজিবাজার, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক খাতের সংস্থার ও উন্নয়নে সরকার নানামূখী কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য পর্যায়ক্রমে ব্যাংকের মূলধনের পরিমাণ বাড়ানো, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংস্কার, প্রয়োজনবোধে ব্যাংক একীভূতকরণ, খেলাপী ঋণ প্রহীতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, সুদের হার এক অংকের মধ্যে আনা এবং হোল্ডিং কোম্পানি ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিসমূহের কার্যক্রম যুগোযুগী করার লক্ষ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার কথা বলা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে আরো উন্নতি হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ শিল্পখাতে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। অপ্রদর্শিত অর্থ শিল্পখাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এছাড়াও অঞ্চলভিত্তিক বেশ কিছু শিল্পখাতে বর্তমানে ৫ বছর পর্যন্ত সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা দেয়া আছে। অন্য দিকে গভীর সমুদ্রবন্দর, আন্ডারগ্রাইন্ড রেলপথ, ফ্লাইওভার, হাইটেক পার্কসহ বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে ১০ বছর পর্যন্ত ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা দেয়া আছে। বাজেটে উভয় ক্ষেত্রে এই কর অবকাশ সুবিধার মেয়াদ আরো ৫ বছর বাড়ানো হয়েছে। যা সরকারের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনারই বহি:প্রকাশ। এই উদ্যোগ দেশের শিল্প উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করবে। আর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী।
এ সময় ডিএসইর চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হাশেম, পরিচালক রকিবুর রহমান, পরিচালক শরীফ আতিউর রহমান এবং পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী উপস্থিত ছিলেন।
সান বিডি/এসকেএস