জিতলে কক্ষপথে, হারলে ছিটকে পড়ার পথে অনেকদূর চলে যাওয়া। দারুণ শুরুর পর টানা দুই ম্যাচ হারা এবং ঠিক আগের খেলায় বৃষ্টির কারণে সম্ভাব্য জয়ের বদলে এক পয়েন্ট হারিয়ে ফেলা- এরকম অবস্থায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে জয় অতি দরকারী।
সেটাই অনেক বড় চাপ। কেউ স্বীকার করুক না করুক, এবারের বিশ্বকাপে এটাই হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ। যার পরতে পরতে থাকবে মানসিক চাপ। সেই চাপটাই অনেক বড় ও কঠিন চ্যালেঞ্জ। এর সঙ্গে যোগ হবে আরও দুটি চ্যালেঞ্জ। প্রথম চ্যালেঞ্জ, ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, শাই হোপ, শিমরন হেটমায়ার আর নিকোলাস পুরানের উত্তাল উইলোবাজি এবং ব্যাটিং তান্ডব সামলানো। তাদের ঝড়ের বেগে ব্যাট চালনা থেকে যতটা সম্ভব বিরত রাখা। তা না রাখতে পারলে মানে ক্যারিবীয় উইলোবাজরা জেঁকে বসলে, নিজেদের বোলি ফিল্ডিং হয়ে যাবে এলোমেলো এবং বড়সড় রানের চাপও হবে যুক্ত।
দ্বিতীয় চাপ হলো ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার ওশানে থমাস, কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল আর শেলডন কটরেলের প্রচন্ড গতি এবং খাট লেন্থ থেকে শরীর, বুক, মুখ, কাঁধ ও মাথা বরাবর আসা ডেলিভারি সামলানো। এই চাপগুলোর সবকটাই চ্যালেঞ্জ ।
এখন প্রশ্ন হলো টিম বাংলাদেশ কোনটাকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে? দলের ভাবনায় কোনটা বেশি কঠিন চ্যালেঞ্জ? নিশ্চয়ই এমন প্রশ্ন উকি ঝুঁকি দিচ্ছে আপনার মনেও। তাহলে শুনুন, রোববার দুপুরে প্রেস কনফারেন্সেও উঠলো এ প্রশ্ন।
বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা অনেক গুছিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, আসল চ্যালেঞ্জটা বোলারদের। সেটা কিভাবে? মাশরাফি ব্যাখা দিতে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যারাই খেলুক না কেন, সব দলের প্রথম লক্ষ্য থাকে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের সহজাত উইলোবাজি, ব্যাটিং তান্ডব থামানো। তারা যাতে নিজেদের মত করে প্রকিপক্ষ বোলিংকে দুমড়েমুচড়ে দিতে না পারে মানে জেঁকে বসতে না পারে।
আর সেই চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে বোলারদের। তাই মাশরাফির কথা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের যারা মূল বোলার এবং যাদের মোকাবিলা করতে হবে, সেই ওশানে থমাস, কেমার রোচ, জেসন হোল্ডার আর শেলডন কটরেল- সবাইকে আমরা গত এক থেকে দেড় বছরে মধ্যে খেলেছি। আমি মনে করি তাদের সামলানোর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্যারিবীয় ব্যাটিং তোড় সামলানো।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমরাই না, বিশ্বের সব দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলার আগে তাদের বিধ্বংসী ব্যাটিং নিয়ে মাথা ঘামায়। ক্যারিবীয় ব্যাটিংটাই আসল চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয়। কারণ তাদের ব্যাটিং তোড় সামলানো যেকোন বোলিং শক্তির জন্য কঠিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা একবার জেঁকে বসলে আর প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে একের পর এক বিগ হিট নিতে থাকলে তাদের আটকে রাখা মুশকিল।’
‘তখন তারা প্রতিপক্ষ বোলারদের পেয়ে বসে। আরও পাওয়ার হিট করে। এতে করে স্কোরলাইন হয়ে যায় বড়। কাজেই সব দল পরিকল্পনা আটে যে করেই হোক ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের জেঁকে বসতে দেয়া যাবে না। আমাদের ভাবনাও অমন। আমরাও আগে ক্যারিবীয় ব্যাটিং নিয়েই চিন্তাভাবনা করছি। আমাদের লক্ষ্যই থাকবে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা যাতে ইচ্ছেমত ফ্রি স্ট্রোক প্লে করতে না পারে। জানি সে কাজটা সহজ নয়, অনেক কঠিন।’
এদিকে বোলারদের ওপর বাড়তি দায় দায়িত্ব দিয়ে এবং তাদের ওপরই মুল চ্যালেঞ্জ- এমন কথা বলেই দায়িত্ব শেষ করবেন মাশরাফি অমন অধিনায়ক নন। কিভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়, সে ফর্মুলাও আছে তার কাছে।
বোলারদের উদ্দেশ্যে তাই তার বার্তা, ‘আমাদের বোলারদের নার্ভ ঠিক রাখতে হবে। জানি গেইল, হেটমায়ার, শাই হোপ আর পুরানরা অনেক বেশি শটস খেলে। অনেক বেশি বল মারতে চায়। সেই শটস বেশি খেলার চেষ্টা এবং বিগ হিট বেশি নেয়ার প্রবণতাটা শুধু প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর বাড়তি চাপ নয়, এক ধরনের সুযোগও। ব্যাটসম্যান বেশি শটস খেললে আউটের সুযোগও দেয় বেশি। আমার বিশ্বাস, আমাদের চান্সও মিলবে বেশি।’
তাই বোলারদের শুরুতে ব্রেক থ্রু আনার কথাও বলে দিয়েছেন মাশরাফি, ‘আমাদের লক্ষ্য থাকবে উইকেট নেয়া। উইকেট নিতে পারলে ক্যারিবীয়রা একটু হলেও বুঝে খেলবে। ব্যাটিং তোড়টাও যাবে কমে।’
মাশরাফির শেষ কথা, ক্যারিবীয়রা যাতে আমাদের বোলিংকে ‘ধ্বংস’ করতে না পারে সে চেষ্টাই থাকবে বেশি। আমাদের বোলারদের প্রাণপন চেষ্টা থাকবে সর্বশান্ত না হওয়া। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের অনায়াসে ব্যাট চালনা থেকে বিরত রাখা।
অফস্পিন দিয়েই হোক আর চার বা তিন পেসার নিয়ে খেলেও হোক, কথা একটাই- কোনোভাবেই যেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা তাদের মত করে জ্বলে উঠতে না পারে। গেইল, শাই হোপ, হেটমায়ার আর পুরানরা স্বরুপে আবির্ভূত হলে তাদের বিপক্ষে পেরে ওঠা কঠিন হবে।