বিশ্বের সবচেয়ে দামি চায়ের মধ্যে অন্যতম দার্জিলিং টি। কয়েক বছর ধরে একের পর এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম দামি এ চা খাত। রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে শ্রমিক সংকট, এর পর প্রতিকূল আবহাওয়া, এমন নানামুখী চ্যালেঞ্জের জের ধরে রফতানি বাজার হারিয়েছে দার্জিলিং চা। কমে গেছে পানীয় পণ্যটির দামও। সর্বশেষ নিলামে অন্যতম দামি এ চায়ের দাম কেজিতে ১৬৮ রুপির বেশি কমে গেছে। এর পেছনে তিন-চার সপ্তাহ ধরে দার্জিলিংয়ে চলমান বৃষ্টিপাতকে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, টানা বৃষ্টিতে দার্জিলিংয়ের বাগানগুলোয় উৎপাদিত চায়ের মান পড়েছে। এ কারণে কমতে শুরু করেছে দামও। খবর ইকোনমিক টাইমস ও বিজনেস রেকর্ডার।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পাহাড়ি জেলা দার্জিলিংয়ে উৎপাদিত চায়ের খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজোড়া। অনন্য স্বাদ ও সুঘ্রাণের কারণে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে এখানকার চা অনেক দামে বিক্রি হয়। দার্জিলিংয়ের ৮৭টি বাগানে প্রতি বছর ৮০-৮৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়। ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন-চার সপ্তাহ ধরে দার্জিলিংয়ে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে বছরের প্রথম পর্যায়ে (ফার্স্ট ফ্ল্যাশ) উৎপাদিত চায়ের মান পড়ে গেছে। ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে তুলনামূলক নিম্নমানের চা কিনতে চাইছেন না। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।
কলকাতাকেন্দ্রিক নিলামঘরে সর্বশেষ নিলামে প্রতি কেজি দার্জিলিং চায়ের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৩১৯ দশমিক ২৮ রুপি, যা আগের বছরের একই নিলামের তুলনায় ৩৪ শতাংশ কম। এক বছর আগে প্রতি কেজি দার্জিলিং চায়ের গড় দাম ছিল ৪৮৭ দশমিক ৩০ রুপি। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিশ্বের অন্যতম দামি এ চায়ের গড় দাম কেজিতে ১৬৮ দশমিক শূন্য ২ রুপি কমেছে।
স্থানীয় চা উৎপাদনকারী এসএস বাগারিয়া বলেন, মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে দার্জিলিংয়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে চা পাতা পুষ্ট হতে পারেনি। মান পড়ে গেছে। চলতি মাসেও বৃষ্টির কারণে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন ১০-১৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। তবে উৎপাদন কমলেও দার্জিলিং চায়ের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ক্রেতারা বেশি দামে তুলনামূলক নিম্নমানের চা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এটা দার্জিলিংয়ের চা শিল্পের জন্য নতুন একটি সংকট।
গত বছরের পুরোটাই সংকটের ভেতর দিয়ে পার করেছে দার্জিলিংয়ের চা শিল্প। স্থানীয় গোর্খা জনগোষ্ঠীর আন্দোলন ও টানা বনধের জের ধরে শ্রমিক সংকটে পড়ে এখানকার চা বাগানগুলো। বন্ধ ছিল চা উৎপাদন ও সরবরাহ। সরবরাহ না থাকায় কলকাতার নিলামকেন্দ্রে চার দশকের মধ্যে প্রথমবার দার্জিলিং চা বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় চলতি বছর লোকসান এড়িয়ে নতুন করে যাত্রা করতে চেয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের চা খাতসংশ্লিষ্টরা। তবে বাগড়া দিয়েছে প্রকৃতি। বছরের শুরুতে তুষারপাত এবং এখন টানা বৃষ্টিতে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। কমে গেছে দাম।
দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বিনোদ মোহন বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় বছরের প্রথম পর্যায়ে চা উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আশা করছি, জুলাই-আগস্ট নাগাদ বৃষ্টির পরিমাণ কমে এসে দ্বিতীয় পর্যায়ে উৎপাদিত চায়ের মান উন্নত হবে। দাম বাড়বে। লোকসান কমে আসবে।
এদিকে এসএস বাগারিয়া জানান, নেপালি চায়ের সঙ্গে বিশ্বখ্যাত দার্জিলিং চাকে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। ভৌগোলিক নৈকট্য ও জলবায়ুগত কারণে নেপালে উৎপাদিত চায়ের মান দার্জিলিং চায়ের কাছাকাছি। তবে দাম বেশ কম। যখন রাজনৈতিক সংকটে দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ ছিল, তখন দেশী-বিদেশী ক্রেতারা তুলনামূলক সস্তা নেপালি চায়ের প্রতি ঝুঁকেছিলেন। এখন বৈরী আবহাওয়ায় দার্জিলিং চায়ের বাজারে নতুন সংকটে নেপালি চায়ের বেচাকেনা জমে উঠেছে। দামে সস্তা হওয়ায় ক্রেতারাও এ চা বেশি কিনছেন। আগামী দিনগুলোয় বিশ্বখ্যাত দার্জিলিং চাকে বিদ্যমান এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাজারে টিকে থাকতে হবে