বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে খাদ্যপণ্যে গুলোর দাম বাড়তির দিকে। গত বছরই বৈশ্বিক খাদ্যমূল্যে এ চাঙ্গা ভাব বজায় ছিল। চলতি বছরের শুরুতে তা আরো জোরালো হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় মে মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে এ সূচকমান চলতি বছরে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে গেছে। মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম কমলেও খাদ্যশস্য, আমিষ ও দুগ্ধপণ্যের দামে চাঙ্গা ভাব বজায় ছিল। মূলত দুগ্ধপণ্যের দামে বড় ধরনের উল্লম্ফন গত মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মাসভিত্তিক ফুড প্রাইস ইনডেক্সে (এফএফপিআই) এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর এফএও।
এফএফপিআইয়ে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ১৬৩ দশমিক ৯ পয়েন্টে। পরের মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৬ দশমিক ৮ পয়েন্টে। মার্চে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আরো বেড়ে ১৬৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়। আর এপ্রিলে এ সূচকমানের অবস্থান দাঁড়ায় ১৭০ পয়েন্টে। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় গত মে মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১৭২ দশমিক ৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
চলতি বছর এটাই এ সূচকমানের সর্বোচ্চ অবস্থান। অর্থাৎ ২০১৯ সাল শুরুর পর মে মাসে সবচেয়ে বেশি দামে খাবার কিনেছে বিশ্ববাসী। তবে আগের মাসের তুলনায় বাড়লেও ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় এ সূচক ১ দশমিক ৯ শতাংশ কম রয়েছে।
এপ্রিলের মতো মে মাসেও সবচেয়ে বেশি চাঙ্গা ভাব বজায় ছিল দুগ্ধপণ্যের বাজারে। এ সময় দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ২ পয়েন্ট (৫ দশমিক ২ শতাংশ) বেড়ে ২২৬ দশমিক ১ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। চলতি বছরের শুরুর তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে দুগ্ধপণ্য। বিশ্বব্যাপী দুগ্ধপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। বিপরীতে ইউরোপের দেশগুলোর উষ্ণ আবহাওয়া আন্তর্জাতিক বাজারে দুগ্ধপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। এ পরিস্থিতি মাখন, পনির, গুঁড়ো দুধসহ বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে গত মাসে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৬২ দশমিক ৩ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ বা ২ দশমিক ২ পয়েন্ট বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে বিদ্যমান বৈরী আবহাওয়া গম ও ভুট্টার সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করছে। অন্যদিকে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ সয়াবিনের বাজারে অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। এসব কারণে এ তিন কৃষিপণ্যের দাম বেড়েছে। তবে দেশে দেশে বাম্পার ফলনের বিপরীতে রফতানি চাহিদা স্থিতিশীল থাকায় এশিয়ার বাজারে চালের দাম খুব একটা বাড়েনি।
গত এপ্রিলের তুলনায় সামান্য বেড়ে মে মাসে আমিষপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১৭০ দশমিক ২ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছে এফএও। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে সোয়াইন ফ্লু দেখা দেয়ায় আমিষপণ্যের দামে চাঙ্গা ভাব বজায় ছিল।
এদিকে গত মাসে ভোজ্যতেল ও চিনির বাজারে বজায় ছিল নিম্নমুখী প্রবণতা। গত মাসে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১২৭ দশমিক ৪ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দরপতন ভোজ্যতেলের সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতিকে মন্দার মুখে ফেলেছে।
অন্যদিকে গত মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম আগের মাসের তুলনায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। এ সময় চিনির বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৭৬ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ৫ দশমিক ৮ পয়েন্ট কম। এবারের মৌসুমে ভারতে চিনি উৎপাদন কমলেও তা প্রত্যাশা ছাড়াবে না। একই সঙ্গে ব্রাজিলে পণ্যটির উৎপাদনে চাঙ্গা ভাব বজায় থাকতে পারে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমতির দিকে রয়েছে