জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৭০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, এমপি।
জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দের প্রসপেক্টাস বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মোচন করা আনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। হয়। অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক মো: আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামালপুরের সংসদ সদস্য মোঃ মোজাফফর হোসেন এম পি, সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মইন উদ্দিন (অব:) । সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) পবন চৌধুরী ।
সালমান ফজলুর রহমান বলেন, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের ফলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৩২ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া পরোক্ষভাবে আরো প্রায় ৪০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যা এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি সুষম উন্নয়নভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে বদ্ধ পরিকর। এ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে বেসরকারি বিনিয়োগ অত্যন্ত অপরিহার্য একটি বিষয়। তিনি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে সরকারের পাশে থেকে দেশে শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণে ভূমিকা রাখতে শিল্প স্থাপনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বেজা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং এ উদ্যোগকে সচল রাখতে সকলের সহায়তা তিনি কামনা করেন। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ একটি বিষয় এবং এজন্য ধৈর্য ধরে রেখে পরিকল্পনা মাফিক ধাপে ধাপে উন্নয়ন কাজ করা সমাপ্ত করতে হবে।
জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল ময়মনসিংহ বিভাগের সর্বপ্রথম বাস্তবানাধীন সরকারি ইকোনমিক জোন। জোনটি সর্বমোট ৪৩৬ একর জমির উপর প্রতিষ্টিত হবে। জোনটি সফল বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৩২০০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। জোনটি কৃষি ভিত্তিক শিল্প ও গার্মেন্টস স্থাপনের জন্য উপযুক্তবলে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্যাস সংযোগ লাইন ও ৩৩/১১ কেভিএ বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ড্রেইনেজ সিসটেম, ভূমি উন্নয়ন, গ্রাউন্ড ওয়াটার রির্জাভার, প্রশাসনিক ভবন, ডরমেটরি, বাউন্ডারি ওয়াল, অভ্যন্তরীন সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমানের পন্য উৎপাদন/রপ্তানি আয় প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বেজা ইতোমধ্যে ২০টি প্রাইভেট অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় প্রি-কোয়ালিফিকেশন লাইসেন্স প্রদান করেছে। এর মধ্যে ১০টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে চুড়ান্ত লাইসেন্স প্রদান করেছে। এছাড়া মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল (১ম পর্যায়) ডেভেলপার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। নাফ ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে ।
উল্লেখ্য যে, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদর ২৩১ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। যেখানে ১.৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ৪৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে । এছাড়া মিরসরাই ও ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের নিকট থেকে ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব বেজা পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যান বলেন- অর্থনৈতিক অঞ্চলে গুণগত বিদ্যুৎ প্রদানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে জামালপুরে সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে। কারণ এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প ব্যবহারের জন্য ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরসহ দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আন্তরিকভাবে কাজ করবে।
সভাপতির বক্তব্যে পবন চৌধুরী বলেন- জোনটি উন্নয়নে বেজা ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ সম্পন্ন হয়েছে । বেজা মনে করে জোনটির উন্নয়নের কাজ আগামী জুন ২০২০ এর মধ্যে সমাপ্ত হবে এবং শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেহ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী –আর তারই প্রমাণ। বেজা একের পর এক উন্নয়ন কাজ হাতে নিচ্ছে এবং সঠিক সময়ে সেসব কাজের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য নিরলস কাজ করে চলেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের সকল সংস্থার সাথে সুসমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করে বেজা এক অসামান্য নজির সৃষ্টি করেছে। যার সুফল ভোগ করবে আগামী প্রজন্ম। তিনি বলেন, জামালপুরে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার ফলে মধ্যাঞ্চলের জনগোষ্ঠী দেশের অর্থনীতির চাকার সাথে সম্পৃক্ত হবে এবং সামষ্ঠিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন উদাহরণ তৈরী হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন- এ উদ্যোগের ফলে জামালপুরে কৃষি ভিত্তিক পরিকল্পিত শিল্প স্থাপনের পথ সুগম হবে। এ অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত হবে ও আয় বৃদ্ধি পাবে। যা টেকসই উন্নয়নের সহায়ক হবে। এছাড়াও দেশী ও বিদেশী প্রযুক্তির মেলবন্ধনে অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়নের একটি ধারা তৈরী হবে এবং তার ফলে দক্ষ এবং কারিগরী অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী সৃষ্টি হবে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেজার নির্বাহী সদস্য মোহম্মদ আইয়ুব। অন্যান্যদের মধ্যে বেজার নির্বাহী সদস্য মো: হারুনুর রশিদ ও অশোক কুমার বিশ্বাস, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাগনসহ বিনিয়োগে আগ্রহী ব্যবসায়ীগণ উপস্থিত ছিলেন।