নতুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে রফতানি খাতে করপোরেট করহার ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই)।
বিসিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বিসিআইয়ের পক্ষে এ প্রস্তাব করেন। এ সময় বিসিআইয়ের পরিচালক দেলোয়ার হোসেন রাজা, মিজানুর রহমান, এসএম শাহ আলম মুকুলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আনোয়ার-উল আলম বলেন, ২০২১ সালে আমাদের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ৬০ বিলিয়নে উন্নীত করাসহ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমারসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে টিকে থাকতে হলে আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত কৌশল হিসেবে আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট রফতানি বাজেট অত্যাবশ্যক।
রফতানি নিয়ে বিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবনায় উেস কর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ, রফতানি খাতে করপোরেট কর ১০ শতাংশ ধার্য করার প্রস্তাব করেছে।
প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়েছে, রফতানি পণ্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত গুণগত মান সনদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা নিশ্চিত করা, মেধাস্বত্ব নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় সব সহায়তা প্রদান করার মাধ্যমে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের মূল্য সংযোজন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, রফতানি বৃদ্ধির সুবিধার্থে সব রফতানি পণ্য খাতে মূসকমুক্ত রেয়াতি হারে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সংযোগ ও সরবরাহের সংস্থান করা, একক এবং রফতানিমুখী গ্রামীণ ও ক্ষুদ্র শিল্প এবং নারী উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে খাতভিত্তিক যৌথ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ডেড-ওয়্যারহাউজ সুবিধা প্রদান করা, রফতানি পণ্য প্রস্তুতকরণে ব্যবহূত আমদানিকৃত এবং দেশীয় উপকরণের ওপর পরিশোধিত সব শুল্ক ও কর মওকুফ গণ্য করে ফেরত প্রদান করা, রফতানিমুখী গ্রামীণ ও ক্ষুদ্র শিল্প এবং নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভেঞ্চার-ক্যাপিটাল ফান্ড থেকে অর্থায়ন করা, বিদেশে প্রদর্শনী বা মেলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করারও দাবি জানিয়েছে বিসিআই।
বিসিআই সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সব ধরনের আমদানি পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ আগাম কর ধার্য করা হয়েছে। এতে শিল্প স্থাপন ও উৎপাদন খরচ—দুটোই বাড়বে, যা সরকারের ব্যবসা সহজ করার নীতির পরিপন্থী। স্থানীয় শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে। তাই দেশের শিল্প উন্নয়নের স্বার্থে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান তিনি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি স্টক লভ্যাংশ দিলে তার ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। এছাড়া রিটেইন আর্নিংসের ওপরও ১৫ শতাংশ কর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিসিআই প্রস্তাবিত এসব কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আনোয়ার-উল আলম বলেন, স্টক লভ্যাংশ এবং রিটেইন আর্নিংসের ওপর কর প্রত্যাহার না করা হলে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, একটি কোম্পানি বাজারে আসার পর বিনিয়োগকারীদের জন্য স্টক ও নগদ—দুই ধরনের লভ্যাংশই দিতে হয়। তাছাড়া কোনো কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অনেক সময় স্টক লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। ফলে কোম্পানিটির ব্যবসা বাড়ে এবং বিনিয়োগকারীদের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে স্টক লভ্যাংশের ওপর যে কর আরোপ করা হয়েছে, তাতে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারে।
আনোয়ার-উল আলম বলেন, দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো লাভ হয় না। কিন্তু তাদের ১৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে মেডিকেল কলেজের ওপর ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দিয়েছে বিসিআই।
বিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবনায় দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং নতুন বিনিয়োগ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সুষম আঞ্চলিক উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য শুধু ঢাকা বা চট্টগ্রামকেন্দ্রিক না করে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত ও অনুন্নত অঞ্চলে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন উৎসাহিত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিশেষ রেয়াতি সুবিধা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া শিল্পে ব্যবহার করা কাঁচামালের ওপর আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর এবং শিল্প পণ্য সরবরাহে ৭ শতাংশ পর্যন্ত উেস আয়কর কর্তন রহিত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
মূসক আইন, ২০১২ বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করার কথা বলেছেন। এ কমিটিতে বিসিআইকে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জ্যেষ্ঠ সদস্যকে প্রধান করে একটি পৃথক ট্যাক্স, ট্যারিফ ও ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বিভাগ গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে বিসিআই। এ কমিটির কাজ হচ্ছে শুল্ক, মূসক ও আয় করহার যৌক্তিক করাসহ রফতানি ও আইনি সমস্যার সমাধান এবং বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়তা করা।
এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মূসক আইনের ৮২ ও ৮৩ ধারায়- সহকারী কমিশনার বা সহকারী পরিচালক বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার মূসক কর্মকর্তা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্দেশ প্রদান করতে পারবে এবং সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সহায়তা প্রদানে বাধ্য থাকবে বলে বিধান করা হয়েছে। যা এ আইনের ১১৪ ও ১১৫ ধারার সরাসরি লঙ্ঘন বলে মনে করছে বিসিআই। তাই ১১৪ ও ১১৫ ধারার বিধান অনুসারে কোনো বিচারিক আদালতের নির্দেশনা ছাড়া এ ৮২ ও ৮৩ ধারা প্রয়োগ করা যাবে না মর্মে বিধান করার দাবি জানিয়েছে বিসিআই।