ভারতের রফতানি আয়ের অন্যতম উৎস চা। দক্ষিণের তামিলনাড়ু থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্বের আসাম, মিজোরামসহ দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে চা উৎপাদন হয়। উৎপাদিত চায়ের উল্লেখযোগ্য একটি অংশই আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করে ভারত। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি জেলা দার্জিলিংয়ে উৎপাদিত বিশ্বের অন্যতম সেরা ও দামি চা রফতানি করে বাড়তি আয় করে দেশটি। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) ভারতের বাগানগুলোয় পানীয় পণ্যটির উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ শতাংশের বেশি বেড়ে প্রায় ১৯ কোটি কেজিতে পৌঁছে গেছে। একই সময়ে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পানীয় পণ্যটির রফতানি আট কোটি কেজি ছাড়িয়ে গেছে। টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বিজনেস লাইন ও ইকোনমিক টাইমস।
টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বছরের প্রথম চার মাসে দেশটিতে চায়ের উৎপাদন ও রফতানির পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে ভারতের বাগানগুলোয় সব মিলিয়ে ১৮ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। তবে মাসভিত্তিক হিসাবে, গত এপ্রিলে ভারতে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ শতাংশ কমে ৮ কোটি ৪৪ লাখ ২০ হাজার কেজিতে নেমে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ কয়েকটি রাজ্যে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গত এপ্রিলে চা উৎপাদন আগের তুলনায় কমে এসেছে। তবে মার্চে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভারতজুড়ে চা উৎপাদনে বড় ধরনের উল্লম্ফন বজায় ছিল। মূলত এ কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী দেশ ভারতে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে পানীয় পণ্যটির উৎপাদনে চাঙ্গা ভাব বজায় রয়েছে।
চা রফতানিকারক দেশগুলোর তালিকায় ভারতের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। পানীয় পণ্যটির সম্মিলিত বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যের ১১ শতাংশ ভারত এককভাবে জোগান দেয়। ইউরোপ-আমেরিকা, আফ্রিকার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও ভারত থেকে রফতানি হওয়া চায়ের বড় ক্রেতা। টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৮ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
এদিকে মাসভিত্তিক হিসাবে গত এপ্রিলে ভারতে চা উৎপাদনে মন্দাভাব বজায় থাকলেও দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পানীয় পণ্যটির রফতানিতে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা মিলেছে। এ সময় ভারতীয় রফতানিকারকরা সব মিলিয়ে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৩০ হাজার কেজি চা রফতানি করেছেন বলে টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। পানীয় পণ্যটির রফতানি বাবদ এ সময় ভারতীয় রফতানিকারকদের আয় দাঁড়িয়েছে ৪০১ কোটি ৩২ লাখ রুপিতে। গত বছরের একই মাসে ভারতীয় রফতানিকারকরা চা রফতানি করে ৩০৮ কোটি ৭৬ লাখ রুপি আয় করেছিলেন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে পানীয় পণ্যটি রফতানি করে ভারতীয় রফতানিকারকদের আয় প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে উৎপাদন বাড়লে সাধারণত পণ্যের দাম কমে আসে। তবে ভারতীয় চায়ের বাজারে ব্যতিক্রম দেখা গেছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে দেশটিতে চায়ের গড় দাম আগের তুলনায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে ভারতের বাজারে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ১৯২ দশমিক ১ রুপি। চলতি বছরের একই সময়ে দেশটিতে পানীয় পণ্যটির গড় দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ২২৩ দশমিক ৮৩ রুপিতে। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে ভারতে চায়ের গড় দামে ১৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও গড় দাম আগের তুলনায় বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভারতের চা রফতানিতে বিদ্যমান চাঙ্গা ভাবকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।