মিয়ানমার থেকে বাস্তচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলোর টেকসই ও সমন্বিত সমাধান চায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ান। ব্যাংককে ৩৪তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন শেষে প্রকাশিত বিবৃতিতে এ প্রত্যাশা স্থান পেয়েছে। জোটের নেতাদের পক্ষে ওই বিবৃতি দিয়েছেন আসিয়ান চেয়ারম্যান ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আসিয়ান সদস্য দেশগুলো পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর নীতি অনুসরণ করলেও এবার সম্মেলনের পর বিবৃতিতে রোহিঙ্গা ইস্যু এবং এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রত্যাশা ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে বিষয়টি যে শুধু মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয় তার স্বীকৃতি মিলেছে। বাংলাদেশও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ানের ভূমিকা প্রত্যাশা করে আসছে। দুই বছর ধরে মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশ এ নিয়ে কাজ করছে। সর্বশেষ গত শনিবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ রোহিঙ্গা নিপীড়নের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাপানের সংবাদমাধ্যম কিয়োটো নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসিয়ান নেতারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জোটবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার করেছেন। আসিয়ান চেয়ারম্যান থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী গতকাল শীর্ষ সম্মেলন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে আসিয়ান দেশগুলোর কূটনীতিকরা বলেছেন, আসিয়ান শীর্ষ নেতারা গতকাল রিট্রিট সেশনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইস্যুতে কথা বলেছেন। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু অত্যন্ত জটিল। মিয়ানমার সরকার এর সমাধান বের করার চেষ্টা করছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো—উভয়েই রাখাইনে ফেরার পর রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দাবি করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরাপত্তাই মুখ্য ইস্যু হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া কখনো প্রত্যাবাসন হবে না।’
আসিয়ানের বিবৃতিতে মিয়ানমার সরকারের ভূমিকার প্রকাশ্যে কোনো সমালোচনা করা হয়নি। একইভাবে মিয়ানমারের অবস্থানের সঙ্গে সংগতি রেখে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দের বদলে ‘বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি’ বলা হয়েছে।
আসিয়ান চেয়ারম্যান প্রায়ুথ চান-ওচা গতকাল শীর্ষ সম্মেলন শেষে জোটের নেতাদের পক্ষে বিবৃতিতে বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সম্মানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় ফেরানোর ব্যাপারে যতটা সম্ভব কার্যকর সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে আমরা জোর দিয়েছি এবং এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারের অঙ্গীকারকে সমর্থন জানিয়েছি।
রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের কার্যকর ও অব্যাহত আলোচনা দেখার প্রত্যাশা জানিয়েছেন আসিয়ান নেতারা। একই সঙ্গে তাঁরা জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) দপ্তর ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সঙ্গে মিয়ানমারের সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আসিয়ান চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংঘাতের মূল কারণগুলোর সমন্বিত ও টেকসই সমাধান বের করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোর পুনর্বাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ওপর আমরা জোর দিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিশনের (আনান কমিশনের) চূড়ান্ত প্রতিবেদনের যেসব সুপারিশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে আমরা মিয়ানমারকে উৎসাহ জোগাচ্ছি।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ এ সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশন জবাবদিহিমূলক ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন আসিয়ান নেতারা।