তিন সপ্তাহ আগেও গ্যাস্ট্রিকের একপাতা ওষুধের দাম ছিল ১০০ টাকা। সেই ওষুধ দাম বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ফার্মেসির কর্মচারীরা জানান, ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি দাম বাড়িয়েছে। তবে হঠাৎ করে ওষুধের দাম বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেনি ওষুধ কোম্পানিগুলো।
রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে জানা গেছে, ওষুধ প্রস্তুতকারক কয়েকটি কোম্পানি তাদের নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। ওষুধগুলো বেশিরভাগই প্রেসার ও গ্যাস্ট্রিকের। এর মধ্যে আছে অ্যাসিফিক্স ২০ এমজি, বাইজোরান ৩/২০ ও ৩/৪০, ওলমেজান ২০ এমজি ও ৪০ এমজি, ফিনিক্স ২০ এমজি এবং ম্যাক্সপ্রো। প্রতিটি ওষুধেরই দাম পিসপ্রতি ২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়েছে।
কলাবাগানের এক ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফিনিক্স আগে ৫ টাকা পিস ছিল। সপ্তাহখানেক আগে আমাদেরকে বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, এ ওষুধ ৭ টাকা পিস করা হয়েছে। তবে নতুন ওষুধ না আসায় আমরা আগের দামেই বিক্রি করছি। অ্যাসিফিক্স ছিল ৫০ টাকা পাতা (১০ পিস) এখন ৭০ টাকা।’
আরেক ওষুধ বিক্রেতা বলেন, ‘গ্যাস্ট্রিক ও প্রেসারের ওষুধের দাম কিছুটা বেড়েছে। এই দাম বাজেটের এক সপ্তাহ আগেই বেড়েছে। বাজেটের পরে সবসময়ই ওষুধের দাম বেড়ে যায়। কোম্পানি বাড়ালে তো আমাদের কিছু করার থাকে না।’
তবে চেইন মেডিসিন শপ লাজ ফার্মার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন মূল্য তালিকা এখনও আসেনি। তাই আগের দামেই ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে।
কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে দাম বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানি দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির এক প্রতিনিধি জানান, বিদেশে বিশেষ করে চীনে কাঁচামালের দাম বাড়ায় ওষুধের দামে প্রভাব ফেলছে।
দাম বাড়ার কারণ জানতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের প্রধান রিজভিউল কবিরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অপসনিন ফার্মার এক্সিকিউটিভ শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য কোম্পানি দাম বাড়ানোয় আমরা বাড়িয়েছি।’
ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব শফিউজ্জামান বলেন, ‘আমার জানা মতে চীনে প্রায় শ’ খানেক ফ্যাক্টরি বন্ধ। পরিবেশ রক্ষায় দেশটির সরকার সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে কাঁচামালের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এর কারণেও ওষুধের দাম বাড়তে পারে।’
ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলছেন, এই দাম ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে অনুমোদন করিয়ে আনা হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ওয়েবসাইটেও নতুন দাম আপডেট করা হয়েছে।
দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘১৯৯৪ সালের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ১১৭টি ওষুধের বাইরে অন্য কোনও ওষুধের দামের বিষয়ে আমাদের এখতিয়ারে নেই। ওই ওষুধগুলোর মূল্য কোম্পানিগুলো নির্ধারণ করে। তারপরও আমরা ওষুধ কোম্পানিগুলোকে দাম সহনীয় মাত্রায় রাখতে বলি। অতিরিক্ত দাম যেন তারা না রাখে সে বিষয়ে পরামর্শ দেই।’