বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান প্রতি ম্যাচেই ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার সঙ্গে লড়াইটা যেন বাকি সবার। সর্বোচ্চ রান সংগ্রহে কখনও অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার, কখনও ইংল্যান্ডের জো রুট শীর্ষে উঠেছেন।
বাংলাদেশের ম্যাচের দিন আবার প্রথম স্থান নিজের করে নিচ্ছেন সাকিব। সোমবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে আবারও ডেভিড ওয়ার্নারকে (৪৪৭) টপকে ব্যাটিংয়ে শীর্ষে উঠলেন সাকিব (৪৭৬)।
বিশ্বকাপে রেকর্ডের পাতা রাঙিয়েই চলেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে কাল বিশ্বকাপে স্পর্শ করলেন এক হাজার রানের মাইলফলক। এই মাইলফলক ছুঁতে সাকিবের লেগেছে ২৭ ইনিংস।
সব দল মিলিয়ে ইতিহাসের ১৯তম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে এক হাজার রান করলেন তিনি। এছাড়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক আসরে পাঁচশ’ রান থেকে মাত্র ২৪ রান দূরে সাকিব।
বিশ্বকাপে তার মোট রান ১০১৬। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ফিফটির পর ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ২৯ রানে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। বাংলাদেশের প্রথম ও ইতিহাসের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে এক ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নেয়ার অনন্য গৌরব অর্জন করেন তিনি।
এই বিশ্বকাপে ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়ে ঠিক জ্বলে উঠতে পারছিলেন না সাকিব। বোলিংয়ে সেরাটা দেয়ার জন্য প্রতিপক্ষ হিসেবে আফগানিস্তানকেই বেছে নিলেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার।
এদিন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট পেয়ে গেলেন। আফগানদের বিপক্ষে ২৯ রানে পাঁচ উইকেট তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। আগের সেরা ছিল ২০১৫ সালে ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪৭ রানে পাঁচ উইকেট।
কাল ১১তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই তুলে নেন রহমত শাহকে। প্রথম স্পেলে করেন মাত্র দুই ওভার। দ্বিতীয় স্পেলের তৃতীয় ওভারে ফিরিয়ে দেন গুলবাদিন নাইব ও মোহাম্মদ নবীকে।
এরপর আসগর আফগানকে ফিরিয়ে পেয়ে যান চার উইকেট। প্রথম সাত ওভারে চার উইকেট নিয়ে সাকিব দেন মাত্র দশ রান। নিজের নবম ওভারে নাজিবউল্লাহ জারদানকে ফিরিয়ে পেয়ে যান পাঁচ উইকেট।
এই ম্যাচের আগে বোলিংয়ের শীর্ষ তালিকায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাল চলে এলেন সেরা বোলিংয়ের শীর্ষ দশে। ছয় ম্যাচে দশ উইকেট নিয়ে তিনি রয়েছেন তালিকায় আট নম্বরে।
‘এই বিশ্বকাপটা আমার দারুণ যাচ্ছে। সৌভাগ্যবশত আমরা শুরুটা ভালো করেছি। ভক্তরা তাই আমাদের পাশে আছে,’ ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে বললেন সাকিব। আফগানিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে বাংলাদেশের সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে মুখ্য অবদান তার।
সাকিব বলেন, ‘ফিফটির জন্য আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। মুশফিক দারুণ ইনিংস খেলেছে। ওকে ছাড়া আমাদের পক্ষে ২৬২ করা সম্ভব হতো না।’ সাকিবের সংযোজন, ‘বিশ্বকাপের জন্য আমি যথাসম্ভব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এখন তা কাজে দিচ্ছে।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বিশ্বকাপে এক হাজার থেকে ৩৫ রান দূরে ছিলেন আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের সেরা অলরাউন্ডার। ম্যাচের ২১তম ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ছুঁয়ে ফেলেন হাজারের উচ্চতা।
তার আগে রশিদ খানের বলে সাকিবকে এলবিডব্লু দেন আম্পায়ার রিচার্ড ক্যাটলবরো। রিভিউ নিয়ে সে যাত্রা বেঁচে যান তিনি। সাকিব তখন ২৬ রানে ব্যাট করছিলেন। নতুন ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম তখনও রানের খাতা খোলেননি।
‘জীবন’ পেয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে মুশফিককে নিয়ে তোলেন ৬১ রান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসরে তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি (৫১) করে মুজিব উর রেহমানের বলে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন সাকিব।
এই বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন সাকিব। দুটি সেঞ্চুরি এবং তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন এ পর্যন্ত। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের।
এক সেঞ্চুরি ও ছয়টি হাফ সেঞ্চুরিতে তিনি করেছেন ৮৩৭ রান। তৃতীয় স্থানে থাকা বাঁ-হাতি ওপেনার তামিম ইকবালের রান ৬৮৮। মাহমুদউল্লাহ চতুর্থ স্থানে (৬৮৭)। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে ৫৩.৩৬ গড় নিয়ে সবার উপরে রয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।
এই আসরের আগে বিশ্বকাপে রেকর্ড উজ্জ্বল ছিল না সাকিবের। তিন বিশ্বকাপ মিলিয়ে ২১ ম্যাচে তার মোট রান ছিল ৫৪০। গড় ছিল ৩০। এ বিশ্বকাপে তার গড় ৯৫.২০। এবার এক আসরেই আগের তিন আসরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে। এছাড়া বিশ্বকাপে এক হাজার রানের পাশাপাশি ৩৩ উইকেট সাকিবের। বিশ্বকাপে হাজার রান ও ৩০ উইকেটের ডাবল নেই আর কারও।