দেশে গত এক দশকে দুধ উৎপাদনের পরিমান বেড়েছে ৩ গুণ। মাংস উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ। এ খাতে বিনিয়োগও বেড়েছে। দেশে দুধের মোট চাহিদার ৩ ভাগের ২ ভাগ এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। বিকাশমান এ শিল্পে দুধ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত দেশের সবচেয়ে গরিব মানুষগুলো। দুগ্ধ শিল্পকে বাঁচানো মানে দেশের গরিব মানুষদের বাঁচানো।
জাতীয় ডেইরি উন্নয়ন ফোরামের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।রাজধানীর বাংলামোটরে একটি হোটেলে এই সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।
এতে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি শুল্ক কমানোর কারণে গুঁড়া দুধ আমদানি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশীয় গুঁড়া দুধ উৎপাদনকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন। তারা গুঁড়া দুধ উৎপাদন বন্ধ করে দিলে গ্রামাঞ্চলের দুধ উৎপাদনকারী লাখ লাখ গরিব খামারি ক্ষতির মুখে পড়বেন।
সংগঠনটির দাবি, আমদানি করা গুঁড়া দুধের ওপর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এই শুল্ক কমপক্ষে ২৫ শতাংশ করতে হবে। তাহলে গুঁড়া দুধ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হতে থাকবেন অনেকে এবং দেশে উৎপাদন বাড়তে থাকবেন। এতে দেশের গরিব দুধ খামারিরাও লাভবান হবেন।
বাজেট চূড়ান্তের সময় এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে উৎপাদিত গুঁড়া দুধকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিবেচনা করে স্থানীয় সরবরাহের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) শূন্য হারে নিয়ে আসা, গবাদিপশুর খাদ্যের কাঁচামাল আমদানি সহজলভ্য করতে সেগুলোর ওপর থেকে আমদানি শুল্কসহ সবধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করা, ভর্তুকি, ঋণসহ সবধরনের প্রণোদনা দিলে এ শিল্প বিকাশ লাভ করবে, যা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।
এ বিষয়ে বেসরকারি আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা অক্সফামের মঞ্জুরুল রশিদ বলেন, ‘দেশে যারা দুধ উৎপাদন করে, তারা সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক গোষ্ঠী। আমাদের দেশের যারা ক্ষুদ্র খামারি রয়েছেন, দুধ উৎপাদনে তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। তার মানে, দুধ শিল্পকে বাঁচানো মানে দেশের গরিব যে মানুষগুলো দুধ উৎপাদন করে, তাদের বাঁচানো। তাদের পাশে দাঁড়ানো।’
প্রস্তাবিত বাজেটে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। সে কর্মসংস্থান তৈরিতেও দুগ্ধ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রাখবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। বলা হয়, দুগ্ধ শিল্পে দেশের গ্রামীণ নারীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ শিল্পের বিকাশে ভবিষ্যতে নারীর কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নও বৃদ্ধি পাবে।
এ সময় আরও কথা বলেন জাতীয় ডেইরি উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
তাদের যত দাবি
দেশের দুগ্ধ শিল্পকে বাঁচাতে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বেশকিছু দাবি-দাওয়া ও প্রস্তাব তুলে ধরে জাতীয় ডেইরি উন্নয়ন ফোরাম। সেগুলো হলো-
দেশের দুগ্ধ শিল্পের বিকাশ এবং উপরে উল্লিখিত উন্নয়ন যৌক্তিকতা বিবেচনায় সবধরনের দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ আদমদানি শুল্ক আরোপ করা।
চার ধরনের দুগ্ধ জাতীয় পণ্যের (এইচএস কোড : ০৪০১১০৯০, ০৪০১২০৯০, ০৪০১৪০৯০ ও ০৪০১৫০৯০) আমদানিতে মূসক হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। এসব পণ্যে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করা।
দেশে উৎপাদিত গুঁড়া দুধকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিবেচনা করে স্থানীয় সরবরাহের ওপর মূসক শূন্য হার নির্ধারণ।
গবাদি পশুর খাদ্যের কাঁচামাল আমদানি সহজলভ্য করতে সেগুলোর ওপর থেকে আমদানি শুল্কসহ সবধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করা।
গুঁড়া দুধ রফতানিকারক দেশগুলোর সরকারের দেয়া ভর্তুকি বিবেচনায় নিয়ে, গুঁড়া দুধ আমদানিতে এন্টিডাম্পিং বা কাউন্টার ভেইলিং শুল্ক আরোপ করা যায় কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।
প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের জন্য বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও এসডিজি বাস্তবায়ন বিবেচনায় সরকার প্রণীত কর্মপরিকল্পনাতে যেসব নতুন প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন।
দেশের চরাঞ্চলকে ‘দুগ্ধাঞ্চল’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ওসব এলাকার তরুণ খামারি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা।
খামারের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য দক্ষ খামার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। তাই খামারিদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য মানসম্মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আরও জোরদার করা।
দেশের চরাঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় দুগ্ধ সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য সহজ শর্তে ঋণ বরাদ্দ দেয়া।