নেদারল্যান্ড ভিত্তিক গ্লোবাল রিপোর্টিং ইনিশিয়েটিভ (জিআরআই), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিঃ এর সহযোগিতায় গত ২৫ জুন, ২০১৯ তারিখে যৌথভাবে ঢাকার স্থানীয় একটি হোটেলে “প্রিপেয়ারিং এ সাসটেইন্যাবিলিটি রিপোট” শীর্ষক ওয়ার্কশপের আয়োজন করে। ওয়ার্কশপের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা, এফসিএমএ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব কে.এ.এম. মাজেদুর রহমান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট তৈরিতে বস্তুগত এবং স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং জিআরআই ২০ মে ২০১৮ তারিখে একটি চুক্তিতে প্রবেশ করে যাতে পারষ্পরিক সুবিধা গ্রহণ করতে পারে যেমন অংশীদারিত্ব, স্টক এক্সচেঞ্জের সক্ষমতা বৃদ্ধি, তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য সেমিনার এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন, তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাসটেইনেবল রিপোর্টিং এর যাত্রার শুরুর ক্ষেত্রে সমর্থন।
মাজেদুর রহমান আরও বলেন, জিআরআই প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুনাফার দিক থেকে বিশ্বের ৯৩% বৃহত্তর কোম্পানির তিন চতুর্থাংশ সাসটেইনেবল রিপোর্ট তৈরিতে জিআরআই এর কাঠামো ব্যবহার করে। জিআরআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী রিপোর্ট ও পরিবেশ রক্ষায় ডিএসই’র তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে সমর্থনের জন্য এবং গভার্ন্যান্স ও স্টেকহোল্ডারদের সম্পর্কের উন্নয়ন, খ্যাতি এবং বিশ্বাস বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নের জন্য ডিএসই ইতোমধ্যে সাসটেইনেবল রির্পোর্টিং এর উপর নির্দেশিকা চালু করেছে এবং সমস্ত তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে এটি অনুসরণ করার জন্য স্বাগত জানিয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ব্যাপকভাবে সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং পরিবেশের দৃঢ়তার উপর জোর দিয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে শর্তারোপ করেছে যে মোট বিদ্যুতের কমপক্ষে ৫% সৌরশক্তির মাধ্যমে উৎপাদন করতে হবে। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, ডিএসই সাসটেইনেবল রিপোর্টিং নির্দেশিকার উপর রেগুলেটরি সংস্থা ও জিআরআই-এর সহযোগিতায় এই সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং এই কর্মশালা থেকে সকল তালিকাভুক্ত কোম্পানি লাভবান হবে। ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও জানান ১০ মাস সময়ের ব্যবধানে ৩টি ওয়ার্কশপ হবে এবং এটি প্রথম কর্মশালা।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা তাঁর বক্তব্যে বলেন, অ্যাকাউন্টিং গবেষকরা প্রথমে ১৯৯৩ সালে সাসটেইনেবল অ্যাকাউন্টিং সম্পর্কে এবং সাসটেইনেবল অ্যাকাউন্টিং এর তিনটি বিভিন্ন পদ্ধতি চিহ্নিত : সাসটেইনেবল কষ্ট, ন্যাচারাল ক্যাপিটাল ইনডেন্টরি অ্যাকাউন্টিং এবং ইনপুট আউটপুট অ্যানালাইসিস। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে এলকিনটন নিয়ে আসেন ট্রিপল বটমলাইন রিপোর্টিং এর মধ্যে রয়েছে মুনাফা, প্লানেট এবং জনগন।
তিনি বলেন,অবশেষে ১৯৯৭ সালে গ্লোবাল রিপোর্টিং ইনিশিয়েটিভ (জিআরআই) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং বর্তমানে তাদের উচ্চ স্তরের সাসটেইনেবল রিপোর্টিং এর মান রয়েছে। যার তিনটি প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেমন স্বচ্ছতা, অন্তর্নিহিতা ও নিরিক্ষা যোগ্যতা। স্বচ্ছতা প্রয়োজন রিপোর্ট প্রস্তুতিতে প্রক্রিয়া, পদ্ধতি এবং অনুমানের পূর্ণ প্রকাশে। অন্তর্ভুক্তিতার প্রয়োজন রিপোর্টিং সত্তায় স্টেক হোল্ডারদের নিয়োজিত করা যাতে রিপোর্ট রিপোর্ট তৈরীতে সহায়তা হয় এবং উত্তরোত্তর এর মান বৃদ্ধি পায়। সাসটেইনেবল রিপোর্টের নির্ভর যোগ্যতা যাচাই করতে নীরিক্ষা যোগ্যতা আভ্যন্তরীণ বা বহিরাগত আশ্বাস প্রদানকারীদের সক্রিয় করে। খুব উন্নত জিআরআই এর মানগুলো কোম্পানির কর্মক্ষমতা ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করতে পারে।
ড. বালা কিছু বিষয় উল্লেখ করেন যেমন: স্থায়িত্বের জন্য একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির হুমকি পরিমাপক এবং প্রকাশ, বৈচিত্র্যের নীতি এবং সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারদের সুরক্ষা যা বিএসইসি কর্পোরেট গভার্ন্যান্স কোড ২০১৮ তে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে এবং এগুলো কোম্পানির বাধ্যবাধকতার স্থায়িত্ব ও ন্যায্যতার বৃদ্ধির জন্য প্রত্যাশিত হয়।
ড. বালা আরও বলেন যে, চলমান নীতি এবং সাবট্যান্স ওভার ফর্ম বহিরাগত অডিটের জন্য দুটি মূল বিষয় এবং যদি জিআরআই এর মান অনুযায়ী সাসটেইনেবল রিপোর্ট তৈরী করা এছাড়াও অডিট করা যেতে পারে। নিরীক্ষার মাধ্যমে সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টের মান আরও বৃদ্ধি করা যেতে পারে। সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্ট ইএমজি ইস্যুগুলোকে এমনভাবে প্রকাশ করে যাতে এই রিপোর্টিং এর মাধ্যমে একটি কোম্পানি দায়িত্ব ছাড়ার মধ্যে তার অবস্থান মূল্যায়ন করতে পারেন এসডিজি অর্জনের দিকে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ডিএসই ও জিআরআই এর যৌথভাবে আয়োজিত এই কর্মশালা সমাপ্তির পর আগামী দিনগুলোতে আরও বাংলাদেশি কোম্পানি এই ধরনের রিপোর্ট তৈরি ও প্রকাশ করবে। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, ডিএসই তাদের জাতিসংঘের এসএসই উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই ধরনের কর্মশালার আয়োজন করবে।
সাউথ এশিয়া গ্লোবাল রিপোটিং ইনিশিয়েটিভের পরিচালক ড. অদিতি হালদার বলেন, সাসটেইনেবল রিপোর্ট তৈরী এবং এটি প্রচারে দক্ষতা ও পারদর্শিতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ১১০ টি দেশ জিআরআই স্ট্যান্ডার্ডগুলো নিয়ে কাজ করছে এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মত নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো একসাথে কাজ করলে এ কাজগুলো আরও সহজ হয়ে যায়। আজকের এই ওয়ার্কশপটি ডিএসই’র সহযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে পরবর্তী সিরিজটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এবং পরবর্তী সিরিজটি ২০২০ সালের প্রথমে অনুষ্ঠিত হবে।
জিআরআই হল একটি আন্তর্জাতিক স্বাধীন সংস্থা যা ১৯৯৭ সাল থেকে কর্পোরেট সাসটেইন্যাবিলিটি রিপোর্টিং এর ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে আসছে। জিআরআই ব্যবসা, সরকার এবং অন্যান্য সংগঠনকে জটিল সাসটেইন্যাবিলিটি ইস্যু, যেমন: জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, দুর্নীতি এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর ব্যবসায়ে প্রভাবকে বোঝায় এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। ৯০টির বেশি দেশে এর কয়েক হাজার প্রতিনিধি রয়েছে। জিআরআই টেকসই রিপোর্টিং-এর উপর বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত স্টান্ডার্ডগুলো প্রদান করে, সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো এবং তাদের স্টেকহোল্ডারগণ এই বিষয়গুলোর তথ্যের উপর ভিত্তি করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।